অনেক পুরুষের মধ্যেই হাইড্রোসিল বা অণ্ডকোষ বৃদ্ধির সমস্যাটি থাকে। কিন্তু তারা লোকলজ্জার ভয়ে এ রোগের কথা চেপেও যান।
জন্মের সময় প্রতি ১০ জন পুরুষ শিশুর মধ্যে প্রায় একজনের হাইড্রোসিল থাকে, তবে অধিকাংশ হাইড্রোসিল চিকিৎসা ছাড়াই প্রথম বছরের মধ্যে মিলিয়ে যায়।
আর পুরুষদের সাধারণত ৪০ বছরের ওপরে- অন্ডথলিতে প্রদাহ বা আঘাতের কারণে হাইড্রোসিল হতে পারে।
হাইড্রোসিল হলো অণ্ডকোষের চারপাশে ঘিরে থাকা একটি পানিপূর্ণ থলি, যার কারণে অন্ডথলি ফুলে যায়। এই পানিটা প্রকৃতপক্ষে জমে থাকে অণ্ডকোষের দুই আবরণের মাঝখানে।
হাইড্রোসিলের সাধারণত ব্যথা হয় না। সাধারণত হাইড্রোসিল ক্ষতির নয়। অনেক সময় চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে আপনার যদি অণ্ডকোষ ফুলে যায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। দেখতে হবে অন্যকোনো কারণে যেমন অণ্ডকোষের ক্যান্সার বা অন্যরোগে অণ্ডকোষ ফুলে গেছে কি না।
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিল কি?
অণ্ডকোষের চামড়া বেশ মোটা, এর মধ্যে দুটি পর্দা আছে এর একটির নাম টিউনিকা ভেজাইলেনিস এবং অপরটি হলো টিউনিকা এলবুজিনিয়া। এই পর্দা দুটি হতে স্বাভাবিক অবস্থায় এক প্রকার জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয় এবং ইহার ফলে পর্দা দুটি মসৃন ও সিক্ত থাকে এবং পর্দা দুটি একত্রে জুড়ে যায় না। কোনও কারণ বশত যখন উক্ত জলীয় পদার্থ স্বাভাবিক অপেক্ষা অধীক পরিমাণে নিঃসৃত হয় আর তা শোষিত না হয়ে পর্দা দুটির মধ্যে জমে থাকে এবং ক্রমশই পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন অণ্ডকোষটি আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে মনে হয়। এই অবস্থাকেই বলা হয় কোষবৃদ্ধি বা হাইড্রোসিল। বাস্তবপক্ষে ইহা অণ্ডকোষের এক প্রকার শোথ বিশেষ।
কারণ : ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা অবস্থায় হাইড্রোসিল হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রায় ২৮ সপ্তাহে স্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুদের অণ্ডকোষ উদর গহ্বর থেকে অণ্ডথলিতে নেমে আসে। প্রতিটা অণ্ডকোষের সঙ্গে একটি স্যাক বা থলি (প্রোসেসাস ভ্যাজাইনালিস) থাকে, এর মধ্যে পানি জমে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ স্যাক বা থলি বন্ধ হয়ে যায় এবং পানি শোষিত হয়। তবে থলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি পানি থেকে যায় তাহলে সেই অবস্থাকে বলে ননকমিউনিকেটিং বা সংযোগবিহীন হাইড্রোসিল। কারণ এ ক্ষেত্রে থলি বন্ধ হয় কিন্তু পানি পেটে ফিরে যেতে পারে না। সাধারণত এক বছরের মধ্যে পানি শোষিত হয়ে মিলিয়ে যায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে থলি খোলা থাকে। এ অবস্থাকে বলে কমিউনিকেটিং বা সংযোগকারী হাইড্রোসিল। থলির আকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে, কিংবা অণ্ডথলিতে চাপ দিলে পেটে ফিরে যেতে পারে।
হাইড্রোসিলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে :
* অণ্ডথলিতে আঘাত
* ইনফেকশন বা সংক্রমণ
* রেডিয়েশন থেরাপি বা রশ্মির সাহায্যে চিকিৎসা।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
অণ্ডথলি ফুলে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করা খুবই জরুরি। কখনও কখনও হাইড্রোসিলের সঙ্গে ইনগুইনাল হার্নিয়া থাকে। এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
শিশুর জন্য : শিশুদের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল সাধারণত নিজে নিজেই মিলিয়ে যায়। তবে যদি আপনার শিশুর হাইড্রোসিল এক বছরের পর মিলিয়ে না যায় কিংবা ওটা আরও বড় হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
রোগ নির্ণয় : সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা করে হাইড্রোসিল নির্ণয় করা হয়। অণ্ডথলি ফুলে গিয়ে বড় হয় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে না। সাধারণত চারপাশের পানির কারণে অণ্ডকোষে হাত দিয়ে অনুভব করা যায় না। যেহেতু হাইড্রোসিলের পানি স্বচ্ছ হয়, তাই আপনার চিকিৎসক অণ্ডথলিতে টর্চের আলো ফেলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে আলোর অণ্ডকোষের বাইরের রেখা দেখা যাবে, এতে বোঝা যাবে ওটার চারপাশে স্বচ্ছ পানি রয়েছে।
যদি আপনার চিকিৎসক সন্দেহ করেন যে আপনার হাইড্রোসিল প্রদাহের কারণে হয়েছে, তাহলে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।
সম্ভাব্য পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে- * আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং পেটের এক্সরে।
জটিলতা
ইনফেকশন অথবা টিউমার : এগুলো শুক্রাণু উৎপাদনে বা শুক্রাণুর কাজে বাধা দিতে পারে।
ইনগুইনাল হার্নিয়া : হার্নিয়া আটকে গেলে জীবন মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* চলাফেরার অসুবিধা
* হাইড্রোসিল বেশি বড় হলে অণ্ডকোষের রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসা : শিশু জন্মের এক বছর পরও হাইড্রোসিল মিলিয়ে না যায় কিংবা আরও বড় হতে থাকে তাহলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল বড় হয়ে অস্বস্তি ঘটালে অথবা আকৃতির কারণে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২:৫০ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ