চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা। আর এমন দূর্ভোগে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা চাঁদপুর বাখরাবাদ গ্যাস অফিসে মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ করেও কর্তৃপক্ষ কোন সমাধানের কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্দ হচ্ছেন গ্রাহকরা। তবে টাকা হলেই গ্যাস সংকটের সমাধান ঘটে। টাকা না হলে এমন দুর্ভোগেই গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
বিশেষ করে চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের ব্যাংক কলোনীতে চরম গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় গত ৬/৭ মাস যাবত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আবসিক গ্যাস বন্ধ থাকে। যার কারণে শত শত পরিবারের রান্না না করতে পেরে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়াও চাঁদপুর শহরের খান সড়ক, পালপাড়া, গাজী সড়ক, নাজির পাড়া, প্রফেসর পাড়া, জি টি রোড, চাঁদপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকটে একই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায় চাঁদপুর বাখরাবাদ গ্যাস বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ভুক্তভোগী হাজার হাজার গ্রাহক প্রায় ৬/৭ মাস ধরে প্রতিমাসে গ্যাসের বিল পরিশোধ করেন ঠিকই কিন্তু তারা প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ব্যবহার করতে পারছেন না। এলাকাগুলোতে ভোরে গ্যাস চলে গেলে তা ফিরে আসে দুপুরে। যার জন্যে গৃহিণীদের সংসারের রান্না নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বাখারবাদ গ্যাস সিস্টেম কোম্পানী লিমিটেড চাঁদপুর আঞ্চলিক অফিসে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেও এই পর্যন্ত কোন সুরাহা পাননি। যার কারণে এসব পরিবার সিলিন্ডার গ্যাসও ব্যবহার করছে এবং প্রতিমাসে গ্যাস বিলও দিতে হচ্ছে।
চাঁদপুর শহরের ব্যাংক কলোনি এলাকার কামাল হোসেন, আমেনা বেগম, আলী আহমদ, আকবর, নাসরিন বেগম, আমেনা আক্তার, ফাতেমা বেগম, সাদিয়া আক্তার, অনু বেগমসহ একাধিক ব্যাক্তিরা জানান, বাসইসটান বিষ্ণুদী সড়ক হতে শুরু করে ব্যাংক কলোনী এবং বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বেশ কিছু স্থানে, প্রায় সাত-আট মাস ধরে তারা গ্যাসের চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
তারা জানান, গত ৭/৮ মাস ধরে প্রতিদিন সকাল ৬/৭ টার দিকে গ্যাস চলে গেলে তা ফিরে আসে দুপুর কিংবা বেলা সাড়ে ১২ টা ১ টার দিকে । যার কারণে গৃহিনীরা সকালের নাস্তা তৈরি করতে গিয়ে গ্যাসের অপেক্ষায় থেকে কঠিন দুর্ভোগে থাকতে হচ্ছে। একটি চুলায় যে পরিমাণ গ্যাসের চাপ থাকে তা দিয়ে ঠিকমতো চুলায় আগুন জ্বেলে রান্না করা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ গ্রাহকের গ্যাসের চুলায় গ্যাস না থাকাতে আগুন জেলে রান্না করাও সম্ভব হয়নি। তাই তাদেরকে নিরুপায় হয়ে এলপি গ্যাস ক্রয় করে এনে প্রতিদিনের রান্নার কাজ সারতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকদিন ২৪ ঘণ্টে গ্যাস থাকলেও গত এক সপ্তাহ আবারও পূর্বের অবস্থা হয়ে যায়। গৃহিনীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করছি। আবার গ্যাস সংকটে ভুগছি। এটা কোন অবস্থাতেই সহ্য করার মতো নয়।
২৩ নভেম্বর রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উল্লেখিত এলাকার অধিকাংশ বাসা বাড়ীতে গৃহিনীদের সাথে আলাপ করে একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ থাকে। যার কারণে রাতে খাবার রান্না করতে হয়।
আমেনা বেগম জানান, গ্যাসের সংকট নিয়ে গ্যাস অফিসে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাইনি। আমরা গ্যাস সংকট এর মাঝেও গ্যাস বিল নিয়মিত পরিশোধ করছি। অথচ আমাদের দুঃখ-দুর্দশা গ্যাস কোম্পানির লোকেরা বোঝার চেষ্টা করে না।
গ্যাসের এই সংকট নিরসনে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড চাঁদপুর বিতরণ কার্যালয়ের ম্যানেজার মহিবুর রহমান রতন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, গ্রাহক বৃদ্ধির কারণেই ব্যাংক কলোনি এলাকায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মূল কারণ হলো দেখা গেছে ১৯৮৯ সালে যে পাইপ দিয়ে গ্যাসের লাইন টানা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত সেই পাইপ দিয়ে একই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে। এতে গ্রাহক বাড়ছে কিন্তু গ্যাসের পাইপ এর চাহিদা বাড়েনি। তাই ওই এলাকায় এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। তবুও জিটি রোড সহ যেসব স্থানে গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তার কিছু কিছু জায়গায় আমরা কাজ করেছি।
তিনি আরো জানান ব্যাংক কলোনীর এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না। তবে ভবিষ্যতে যদি গর্ভমেন্ট গ্যাস লাইনের উন্নত কাজ করে পাল্টে দেন। তাহলে হয়তো এই সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া গ্যাসের ন্যাশনাল গ্রেডের সমস্যার কারণে সব স্থানেই সমস্যা হচ্ছে।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ২৩ নভেম্বর ২০২০