পুরানবাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের সেমাই

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারে বেশ কয়েকটি সেমাই কারখানায় দিন-রাত তৈরি হচ্ছে সেমাই। তার মধ্যে কয়েকটি কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের সেমাই তৈরি হতে দেখা যায়। বিএসটিআইসহ কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই সেমাই উৎপাদনে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিলেও কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধরনের খাদ্য গ্রহণে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র পুরান বাজার এলাকায় বহু বছর থেকেই বেকারি ব্যবসায়ীরা দুই ঈদ উপলক্ষে সেমাই উৎপাদন করছেন।
কিন্তু বিএসটিআই অনুমোদন কিংবা খাদ্যের গুনগত মান যাচাই এর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে অনেক সেমাই কারখানায় এসব নিম্ন মানের সেই উৎপাদন করে যাচ্ছেন।
পুরান বাজারের আজমীরী ফুড প্রোডাক্স নামের সেমাই কারখানাসহ বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব সেমাই উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে বর্তমানে।
কারখানাগুলোতে উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা, ভোজ্য তেল ও লবণ ইত্যাদি খুবই নিম্নমানের। বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা অধিকাংশ সেমাইগুলোতে নোংরা ও পোকা মাকড় পড়ে থাকতে দেখা যায়। শ্রমিকের শরীরের গামও ঝরে ময়দা ও সেমাই এর উপর।
মঙ্গলবার ২ এপ্রিল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শহরের পুরান বাজার নিতাইগঞ্জ রোডে আজমীরী ফুড প্রোডাক্টস নামের সেমাই কারখানায় অধিকাংশ সেমাইগুলোতে নোংরা ও পোকা মাকড় পড়ে আছে। মেঝেতে রয়েছে কাঁদাযুক্ত মাটি। ফ্লোরে কোন রকম পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা ছাড়াই এইসব ময়লা মাটির ভিতরে তৈরী করছে খাবারের এই সেমাই। আজমীরী বেকারী মালিক মোঃ ইউসুফ কে নিম্ন মানের ও অস্বাস্থ্যকর পরি বেশে সেমাই তৈরির অপরাধে গত বছর জরিমানা করা হয়েছিল। এবারও তিনি নোংড়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরী করছেন। তবে তিনি প্রশাসনের কোন কথা শুনছেন না বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। অনেকটা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় কিছু লোকদের ম্যানেজ করে এই কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
অনেকে অভিযোগ করছেন বেকারীর ভিতরে যে গ্যাসের চুলাটি রয়েছে সেই চুলাটি বাসা-বাড়ীর চুলা। তিনি অবৈধভাবে গ্যাসের চুলা বানিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করছেন।
এদিকে নিতাইগঞ্জ রোডের আলম সেমাই কারখানা, নদীর পাড়ে মীম সেমাই কারখানা, রনাগোয়ালের পূবালী সেই কারখানা, মেরকাটিজ রোডের রূপালী সেমাই কারখানা, রয়েজ রোডের কোহিনুর সেমাই কারখানাসহ বেশ কয়েকটি সেমাই কারখানার শ্রমিকরা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দিন ও রাতে কাজ করে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের হাতে গ্লাব্স, মুখে মাস্ক ও পায়ে প্লাস্টিক গামবুট থাকার কথা থাকলেও কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই তাদের। অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের একসঙ্গে উৎপাদন কাজ করতে হচ্ছে। আর এসব উৎপাদিত সেমাই চাঁদপুর জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মার্কেটে বাজারজাত করা হচ্ছে। নোংরা পরিবেশের বিষয়ে কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা কথা বলতে নারাজ। বাস্তবে সেমাই কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ থাকলেও তা অস্বীকার করছেন মালিকরা।
এব্যাপারে আলম সেমাই কারখানার মালিক হাজী আলম বলেন, আমরা সকল কাগজপত্র এবং পরিবেশ সম্মত সেমাই তৈরি করছি। কিন্তু অনেক কারখানা রয়েছে যাদের কোন মান নেই। ময়লা আবর্জনা ভিতরেই নিম্নমানের সেমাই তৈরি করছেন।’
পুরান বাজারের কারখানার শ্রমিকরা বলেন, তারা সারাদিন কাজ করার পরে কারখানাগুলো পরিষ্কার করে রাখেন।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব সেমাইসহ যেকোন খাদ্য উৎপাদনে কারখানায় পোড়া তেলসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেগুলো খেলে গ্যাস্টিক, আলসার, আমাশয়, পাতলা পায়খানাসহ ক্যানসারও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানিয়েছেন। তাই এই ধরনের খাদ্য বর্জন করাই উত্তম।
এদিকে অনেকে বলেছেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির বিষয়টি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ক্ষতিয়ে দেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

প্রতিবেদক: এম কে এরশাদ, ৫ এপ্রিল ২০২৪

Share