জীবনের অনিবার্য গন্তব্যে চলে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যাবার বেলায় তিনি রেখে গেছেন সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষভাগে ১৯৪৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম উত্তরবঙ্গের ছায়াঘেরা শহর— দিনাজপুরে। সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বেগম জিয়ার জীবনীগ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’–এ লিখেছেন, বেগম জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরও বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৫ আগস্ট বলে প্রকাশিত হয়। সেই সময় জন্ম তারিখ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। পরে একটি মহল তার জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম। তার ডাক নাম পুতুল। বাবা ইস্কান্দর মজুমদারের বন্ধু চিকিৎসক অবনীগুহ নিয়োগী সদ্য প্রসূত কন্যাকে ‘শান্তি’ নামে সম্মোধন করেন। কারণ ওই সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আওয়াজ ওঠেছে সারা বিশ্বে।ভারতসহ নানা দিকেই তখন শান্তি মিছিল, মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই নতুন জন্ম নেওয়া শিশুকন্যার নাম হয়ে উঠলো ‘শান্তি’। পরবর্তী সময়ে মেঝো বোন সেলিনা ইসলামের রাখা ‘পুতুল’ নামটিই জড়িয়ে গেল খালেদা জিয়ার ডাক নাম হিসেবে।
খালেদা জিয়ার আদিবাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায়। তার বাবার নাম ইস্কান্দর মজুমদার ও মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তিন বোন (খুরশিদ জাহান হক চকলেট, সেলিনা ইসলাম বিউটি ও খালেদা খানম পুতুল) ও দুই ভাইয়ের (মেজর সাঈদ ইস্কান্দর ও শামীম ইস্কান্দর) মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। এদের মধ্যে এক বোন সেলিনা রহমান, ভাই শামীম ইস্কান্দর জীবিত আছেন। দুই সন্তান তারেক রহমান পিনো ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর জননী তিনি।
১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমান যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন, তখন তাদের বিয়ে হয়। তিনি বিয়ের পরই স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে খালেদা জিয়া নাম নিয়েছিলেন বলে তার বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন।
১৯৮১ সালে ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামেএকদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন।
খালেদা জিয়ার বয়স তখন মাত্র ৩৬।তখন তিনি একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান-দুই সন্তান নিয়েই ছিল তার সংসার।
সংসারের বাইরে খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না। এর আগে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হনঅল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর খালেদা জিয়া পুরুষ শাসিত সমাজে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে এসে যোগ্যতা দিয়ে নিজের আসন তৈরি করে নেন।
১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।
গভীর শোক এবং রাজনৈতিক জীবনের কঠিন বাস্তবতা নিয়ে দ্বিধায় থাকার কারণে খালেদা জিয়া প্রথমে রাজনীতিতে আসতে চাননি। কিন্তু তার ওপর চাপ বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন।
রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলেও এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় খালেদা জিয়া এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করেন।
মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, ‘আজকে আমরা যে বিএনপি দেখি, তা খালেদা জিয়ার হাতেই গড়া।’
খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফার দায়িত্বকাল ছিল এক মাস।
১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি বিজয়ী হয়। ওই বছরই বেগম জিয়া পঞ্চম সংসদে প্রধানমন্ত্রী হন। তার নেতৃত্বেই সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন হয়।
১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক মাসের জন্য ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়নের পর ওই বছর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি, তিনি হন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।
১৯৯৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, গোলাম আজমের (একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত) নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে গঠিত চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী দলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেন তিনি। একইসঙ্গে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই সে বছর নির্বাচন থেকে বিরত থাকে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া যখন কারাগারে, তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সমন্বয় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে থাকায় সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। এমনকি এই নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যই অংশগ্রহণ করেননি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়নি তার দল।
ওয়ান-ইলেভেনের আলোচিত মঈন উদ্দীন ও ফখরুদ্দীন সরকারের সময়ে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের সাজা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে তাকে রাখা হয়। এরপর ওই বছরের ১ এপ্রিল তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি করা হয়। পরে নিম্ন আদালতের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর দফা-দফায় ছয় মাস করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সাবেক সরকার। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরদিন (৬ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া।
এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর কারারুদ্ধ হন তিনি। পরে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে কারাগারে যাওয়ার আগে ৭ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া শেষবার সংবাদ সম্মেলন করেন। শায়রুল কবির খান উল্লেখ করেন, বেগম জিয়া সর্বশেষ সমাবেশ করেন ২০১৭ সালে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রথম সরকারের শেষদিকে সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
সেই আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এক দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ষষ্ঠ সংসদ গঠন করে খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ষষ্ঠ সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস করা হয়। তবে সেই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১২দিন। সংসদ ভেঙে দিয়ে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসেছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে খালেদা জিয়া বিএনপিসহ তাদের জোটের নেতৃত্ব দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাতে সফলতা আসেনি।
তখন ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারিয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে তাঁকে জেলেও যেতে হয়। খালেদা জিয়া বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামী সহ কয়েকটি দলকে নিয়ে চার দলীয় জোট করেছিলেন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।
সেই জোট পরে ২০ দলীয় জোট পরিণত হয়। জোটে ইসলামপন্থী দলের সংখ্যা বেশি ছিল। জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক সমালোচনাও হয়েছে।তবে এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার একক দায় নেই বলে মনে করেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ।
এরশাদের শাসনামল ছাড়াও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের আটই ফেব্রুয়ারি। তখন তার ১৭ বছরের সাজা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পর্কিত দুর্নীতির দু’টি মামলায়। তবে দুই বছরের বেশি সময় জেল খেটে অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন। শর্তগুলো ছিল – এই সময়ে তার ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। পরবর্তীতে কয়েক দফায় তার সেই মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এরপর খালেদা জিয়া দৃশ্যমান কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। গুলশানের বাসভবনে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থাতেই ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। তখনো শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
একপর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। এছাড়া তার ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস, কিডনি ও হৃদরোগের জটিল সমস্যা রয়েছে। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার আবেদন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় আইনগত কারণে এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই।
পরে ২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তখনো তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিলো।
এর আগে থেকেই তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিংও পরানো হয়েছিল।
এছাড়া ২০২৪ সালের জুনে পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে। গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্টেই নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখন তাকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে নেয়া হয়েছিলো যাতে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটরসহ জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছিলো।
লন্ডনে চার মাস থেকে দেশে ফেরার পরেও খালেদা জিয়াকে কয়েকবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তিনি গুলশানের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।
২০২৪ সালের আগস্টে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তাকে সীমিত পরিসরে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে যােগ দিতে দেখা গেছে।সবশেষ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। পরে শ্বাসকষ্ট হলে ২২ নভেম্বের তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া হয়।য়।
বয়স ও অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় থাকলেও পাঁচ অগাষ্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গেলেও, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষই তাকে সম্মানের চোখে দেখেছে।
দলের ভেতরে বিএনপি তাকে রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবেই সামনে এনেছে সব সময়। সবশেষ নভেম্বেরর শুরুতে যখন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন ঘোষণা করা হলে খালেদা জিয়াকে তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট ৫০ পাউন্ডের কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন খালেদা জিয়া। ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে তিনি কেক না কাটলেও সন্ধ্যার পরে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন। আর ২০১৬ সালে বন্যা, গুম-খুনের কারণে কেক কাটেননি। ২০১৭ সালে জন্মদিনে লন্ডনে ছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ৭৪তম জন্মদিনে তিনি ছিলেন পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরপর আর কখন জন্মদিনে কেক কাটেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur