চলতি শীত মৌসুমের পিঠার দোকানগুলোতে রীতিমতো মেলা বসে পিঠাপ্রেমিদের। বিশেষ করে বিকাল ৩টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে দোকানে, আর তাই শীত মৌসুমে বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কচুয়ার পিঠা ব্যবসায়ী মো: শাহ আলম। তারই ব্যতিক্রম চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার উজানী গ্রামের শাহ আলমের তৈরি ১শ ২১ পদের ভর্তা দিয়ে চাপটি ও চিতই পিঠা খেতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন পিঠা প্রিয় মানুষজন। দেশি স্বাদের ভর্তা, পিঠা ও ঐতিহ্যবাহী রান্নার সমাহারে দোকানটি ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকাবাসীর কাছে, একটি নির্ভরযোগ্য খাবারের জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার উজানী দক্ষিণ বাজার স্কুল সংলগ্ন অবস্থিত ‘তিন ভাই হোটেল এন্ড পিঠা ঘর’। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত শাহ আলম। প্রথমে আড়াই কেজি চালের গুড়া দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বাবার সাথে একসময় তিনি এ ব্যবসা করতেন। তার ছেলে কাজী ইমন পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সাথে কাজ করেন দোকানে। বিশেষ করে প্রতি শুক্র ও শনিবার তৈরি হয় ১২১ পদের ভর্তা, অন্যান্য দিনে ৬৬টি পদের ভর্তা। প্রতিটি বাটিতে আলাদা স্বাদ, আলাদা ঘ্রাণ-দেশি রান্নার আসল অনুভূতি। প্রতিদিন ৮টি চুলায় ৫শ থেকে ৬শ টিরও বেশি চিতই পিঠা ও ১টি চুলায় ২শ টির বেশি ভাপা পিঠা তৈরি করেন। প্রতিটি চিতই বিক্রি হয় ১০ টাকা ও ভাপা পিঠা ৫ টাকায়। তবে ডিম ও মসলাসহ স্পেশাল ডিম পিঠা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। ১শ ২১ পদের ভর্তা গুলোর মধ্যে ৪২টি শুঁটকি, ১১টি মাছ, বাদাম, ধনেপাতা, মরিচ, মৌসুমি সবজি ব্যবহার করে বিভিন্ন ভর্তা তৈরি করেন। প্রতিদিন ৩৫ কেজি দুধ দিয়ে মালাই চা, তান্দুরী চা, বিক্রি করেন ও ১শ ২০ কেজি চালের গুড়া দিয়ে তৈরি হয় নানান রকমের পিঠা। তার দোকানে মহিলা ১০জনসহ মোট ১৪জন কারিগর রয়েছে। দৈনিক ১০-১৫ হাজার টাকা বিক্রি করেন, মাসিক ইনকাম ৪০ হাজার টাকা শাহ আলমের।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই নিজ হাতে প্রস্তুত করেন নানান স্বাদের খাবার। ঘরোয়া রান্নার স্বাদ, বৈচিত্র্যময় মেন্যু এবং সুলভ দামের জন্য প্রতিদিনই ভিড় থাকে ‘তিন ভাই হোটেল এন্ড পিঠা ঘর’ এ। গ্রামীণ হোটেলের এই উদ্যম ও সৃজনশীলতার উদাহরণ এখন। দেশি রান্নার এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি খাবারের মান ও স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে আমাদের।
উদ্যোক্তা কাজী শাহ আলম বলেন, এখানে শুধু ভর্তাই নয়, পাওয়া যায় হরেক রকমের দেশি পিঠা ও চা। পিঠার ও চায়ের স্বাদ ও নিতে প্রতিদিনই ভিড় জমে ক্রেতাদের। শুধু তাই নয়, ঘরোয়া পরিবেশে মাটির হাঁড়িতে রান্না করা হাঁস, মুরগি, কোয়েল পাখি, খাসি, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ইলিশসহ নানা রকম আইটেম পরিবেশন করা হয়। প্রতি শুক্র ও শনিবার বিশেষভাবে ‘খেপসা ও মেজবানী’ পরিবেশন করা হয়, যা খেতে অনেক দূর থেকে আসেন খাদ্যরসিকরা। সবমিলিয়ে তিন ভাইয়ের ব্যবতিক্রমী এ পিঠার দোকান জমে উঠেছে।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু,
৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur