এ যেনো এক গ্যাঁড়াকলে এরশাদ, শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থায়। হঠাৎ করেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে অব্যাহতি দিয়ে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফের মহাসচিব ঘোষণা করেছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এরশাদের বনানী অফিসে মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব মনোনীত করেন এরশাদ।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমি হাওলাদারকে সরিয়ে বাবলুকে মহাসচিব করেছিলাম। বাবলু ২ বছরে একদিনও দলের বর্ধিত ও প্রেসিডিয়ামের সভা ডাকতে পারেনি। তিনি হঠাৎ করে পার্টির প্রেসিডিয়াম ও বর্ধিত সভা ডাকতে পারেন না। আমার ঘোষণার পর তিনি পার্টিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। তাকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’
রওশনের সঙ্গে বিরোধ নেই, তিনি সংসদ চালাবেন
এরশাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। তিনি সংসদ চালাবেন, আমি পার্টি চালাব। বিকেলে সংসদীয় দলের বৈঠক রয়েছে, সেখানেও আমি থাকব। আমাদের মধ্যে বিভেদের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের কোনো বিরোধ নেই।’
রওশন প্রসঙ্গে এরশাদ আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রেসিডিয়ামের কোনো বৈঠক ডাকেননি। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উনাকে দিয়ে তারা স্টেটমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। উনি স্টেটমেন্ট দেন না। এ পার্টিকে কেউ বিভক্ত করতে পারবে না।’
এর আগে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো- চেয়ারম্যান নিযুক্ত করায় এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে পাল্টা কমিটি করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদপন্থীরা। রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদীয় দলের একাংশের যৌথ সভায় রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। দলের একাংশের এ সিদ্ধান্তের কথা বৈঠক শেষে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তবে বাবলু সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
বাবলুর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়ে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
তবে ভাঙনের এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘অসম্ভব জাপা ভাগ হবে না। আমি জাপার চেয়ারম্যান। যারা এর আগে চলে গেছে, তাদের সঙ্গে ৮-১০ জন লোকও যায়নি। যে দু’জন (ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু) দলে বিভ্রান্তির চেষ্টা করছেন, তাদের সঙ্গেও কেউ নেই। আজকের ঘটনায় জাপায় নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।’
এরশাদ বলেন, ‘জি এম কাদের পার্টির কো-চেয়ারম্যান। আমি তাকে যেটুকু দায়িত্ব দেব তিনি ততোটুকুই পালন করবেন। আর হাওলাদার এর আগেও তিনটি কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই তাকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়েছে।’
এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সর্বশেষ কাউন্সিলে কাজী জাফরকে চেয়ারম্যান ও হাওলাদারকে সদস্য সচিব করেছিলাম। এর আগে ব্যারিস্টার আনিসকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলাম, হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়েছিলাম, তখন তো গঠনতন্ত্রের কথা বরা হয়নি। এখন কেন বলা হচ্ছে। আমি পার্টির চেয়ারম্যান, আমার ক্ষমতা রয়েছে। আমি ৩৯ ধারা মোতাবেক যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি। পরে সেটা প্রেসিডিয়ামে পাস করিয়ে নিব।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সম্মান করেন। আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমি উনাকে (প্রধানমন্ত্রী) বলব, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি সারাদেশ ঘুরে বেড়াব, পার্টিকে শক্তিশালী করব। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।’
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের বাম পাশে ছিলেন জি এম কাদের। ডান পাশে ছিলেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সোমবার রওশন এরশাদের বাসভবনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, আবুল কাশেমও। আরও উপস্থিত ছিলেন—জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূ্ঁইয়া, নুরুল ইসলাম নুরু প্রমুখ।
এদিকে সোমবার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান কোনো পদ নেই। গতকাল পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে কোনো আলোচনা ব্যতিরেকে তার আপন ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও তার উত্তরাধিকার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে পার্টির সম্মেলনের জন্য জি এম কাদেরকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব ঘোষণা দেন। ইহা গঠনতন্ত্রের সম্পূর্ণ বহির্ভূত।’
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৫:৫৩ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur