আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চলমান নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে বিএনপির আজকের গণসমাবেশকে ‘গুরুত্ববহ’ মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি বার্তা দেন— সেদিকে চোখ-কান খাড়া রাখছে প্রায় সবাই।
এ ব্যাপারে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা আভাস মিলেছে।
তারা ইত্তেফাককে জানান, সরকার, দেশবাসী, প্রশাসন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি কিছু আহ্বান রাখবেন তিনি।
এ ছাড়া কিছু সতর্কতার কথা বলার পাশাপাশি প্রয়োজনে গণআন্দোলনের পরোক্ষ বার্তাও দিয়ে রাখবেন বিএনপি প্রধান। একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর উদ্দেশেও কিছু বার্তা দিতে পারেন তিনি।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রস্তুত করার সঙ্গে সম্পৃক্ত-বিএনপির এমন দু’-একজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আজকের গণসমাবেশে তিনি সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতির বদলে শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সরকার ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবেন।
প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ দেশ রেখে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ রাখবেন। বলতে পারেন সমঝোতার পথে হাঁটার কথা। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে আগামীতে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকারের উদ্দেশে আহ্বান জানাবেন।
বলবেন, নিরপেক্ষ সরকার ও প্রশাসন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্য এখন থেকেই সুস্থ রাজনীতির পথে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে সবার জন্য সমতল মাঠ তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ করবেন।
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে দেশবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাবেন খালেদা জিয়া। গুম-খুন ও বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিপীড়ন বন্ধ করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কথা বলবেন তিনি।
সরকারের উদ্দেশে বলতে পারেন- একটি দেশ এভাবে চলতে পারে না, দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ও কার্যকর সংসদ প্রয়োজন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেন অটুট থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানাবেন। বিচারবিভাগ, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপমুক্ত করার অনুরোধ জানাবেন।
বলতে পারেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংকটে পড়ে যেতে পারে।
গণসমাবেশে খালেদা জিয়া কী বক্তব্য রাখবেন সেটি সম্পর্কে মোটামুটি ওয়াকিবহাল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির এমন একজন নেতা ইত্তেফাককে জানান, সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলতে পারেন, সময় ঘনিয়ে আসছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করুন, গোঁ ধরে আলোচনা-সমঝোতার দরজা বন্ধ করবেন না, পাঁচ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচনের নীলনকশা করবেন না, যদি আবারো একই ভুল করেন তা হলে গণতন্ত্র চরম হুমকিতে পড়বে, আর এ ধরনের কিছু ঘটলে এর দায় ক্ষমতাসীনদেরই নিতে হবে। এর সঙ্গে সরকারকে সতর্ক করে বলতে পারেন, কোনো নীলনকশার নির্বাচন করতে গেলে জনরোষে পড়বেন, আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলবো।
বিএনপির দায়িত্বশীল আরেক নেতা জানান, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশেও কথা বলবেন খালেদা জিয়া। তাদের উদ্দেশে তিনি বলতে পারেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আপনারা নিরপেক্ষ আচরণ করুন, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না, এতদিন যা করেছেন আমরা ভুলে যেতে চাই, কথা দিচ্ছি জনরায় নিয়ে বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কোনো প্রতিশোধ নেবে না, আমরা প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবো না, আপনাদের কারো চাকরি যাবে না।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশেও খালেদা জিয়া কিছু কথা বলতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি বলতে পারেন, আপনি সমঝোতার পথে আসুন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পদক্ষেপ নিন, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের ফল যাই হবে আমরা মেনে নেবো, জনগণের রায়ের মাধ্যমে যদি ক্ষমতার পরিবর্তন হয় এবং আমরা সরকার গঠন করি তা হলে আপনাদের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হবে না।
সবশেষে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলতে পারেন, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, আমার স্বামী (জিয়াউর রহমান) রাষ্ট্রপতি ছিলেন, আমি সন্তানসহ পরিবারের অনেক সদস্যকে হারিয়েছি, আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই, একটি শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই, আসুন সবাই সেই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করি।
এ দিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন’ সম্পর্কে ‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’ দেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও জাতীয় সংহতি দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশ ডাকা হলেও এটিই সমাবেশের মূল লক্ষ্য নয়, সেই সঙ্গে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য চলমান যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে, জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার যে মেসেজ বা তিনি যে বাণী দেবেন- সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সমগ্র দেশের সচেতন মানুষ মনে করে।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১ : ০০ পিএম, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ রোববার
এইউ