মাথাব্যথা সারাতে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ব্যথার কারণ জানতে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা যেতে পারে। দরকার পড়লে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। কিন্তু মাথাব্যথা কমানোর চিকিৎসা হিসেবে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান হতে পারে না। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেদিকেই এগোচ্ছেন। যে অভিবাসীদের অবদানের ভিত্তির ওপর আমেরিকা দাঁড়িয়ে আছে, ক্ষমতায় বসেই তাঁদের প্রতি চরম বৈরী আচরণ শুরু করেছেন তিনি। তাঁর প্রশাসন বলছে, অভিবাসীরা চেইন অভিবাসন ক্যাটাগরির বা পারিবারিক আবাসনের সুযোগ নিয়ে নিজ নিজ দেশ থেকে অদক্ষ, বয়স্ক ও অনেক ক্ষেত্রে উগ্রপন্থী স্বজনদের আমেরিকায় নিয়ে আসছেন। তাঁদের অবাধ আগমন ঠেকাতে এই পারিবারিক অভিবাসন আইনে পরিবর্তন আনা হবে। অভিবাসী আসা বন্ধ হলে আমেরিকা আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ হবে।
বছরের পর বছর বিভিন্ন দেশের লোক বিভিন্ন ধরনের ভিসা নিয়ে আমেরিকায় এসেছেন। কেউ ডিভি লটারিতে, কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে, কেউ দক্ষ কর্মী হিসেবে, কেউ বিনিয়োগকারী হিসেবে। কিন্তু এসব ক্যাটাগরির বাইরে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এসেছেন চেইন অভিবাসনের আওতায়। আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া লোকজন নিজ দেশ থেকে তাঁদের স্বজনদের এই পারিবারিক ভিসার আওতায় আমেরিকায় নিয়ে আসতে পারছেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলছে, বাংলাদেশ থেকে গত ১২ বছরে প্রায় দেড় লাখ লোকের অভিবাসন ঘটেছে এই পারিবারিক অভিবাসনের আওতায়। প্রতি দুজন অভিবাসী এর সুযোগ নিয়ে সাতজন করে লোকের অভিবাসন করিয়ে থাকেন। এসব অভিবাসনের জন্য অভিবাসীর অন্য কোনো যোগ্যতা থাকা জরুরি নয়। যোগ্যতা কেবল মার্কিন অভিবাসীর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক। এই অভিবাসনের জোরে অনেকেই দেশের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ মা–বাবাকে আমেরিকায় নিয়ে আসতে পারছেন। পারিবারিক অভিবাসনের আবেদনে বাংলাদেশের ঠিক কত লোকের আবেদন জমা আছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে আমেরিকাপ্রবাসী প্রায় প্রতিটি পরিবারের লোকজন এই অভিবাসন আবেদনের আওতায় আছেন। অনেকেই বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন।
কিন্তু এরই মধ্যে হোয়াইট হাউস পারিবারিক অভিবাসন বন্ধে কংগ্রেসকে আইন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে। কংগ্রেসে আইনপ্রণেতারা এটি করতে রাজি না হলে ট্রাম্প যে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে এটি বন্ধ করবেন, সে আভাসও দেওয়া হয়েছে। এটি অভিবাসীদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। শঙ্কা নেমে এসেছে কমিউনিটি জুড়ে।
নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো মনে করছে, ট্রাম্পের এই নীতি সর্বৈব ভুল। এটি বিশ্বে আমেরিকার ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করবে। মা–বাবা কিংবা অন্য কোনো স্বজনের প্রতিপালনে বড় হয়ে যে মানুষটি আমেরিকায় এসে এই দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছেন, তাঁর মা–বাবা নিজেদের সন্তানের সঙ্গে বাস করতে পারবেন না, সেটা বিবেকবান মানুষের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন। (প্রথম আলো)
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:০৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার
এএস