পান চাষে বিখ্যাত হাইমচর উপজেলা। এ উপজেলার কুষকদের প্রধান অর্থকারী ফসল পানচাষ। কিন্তু বর্তমান সময়ে হাট-বাজারে পানের ব্যাপক আমদানি হলেও পানের নেই তেমন কোন মূল্য। পান চালানেও বিপাকে পড়েছে পান চাষিরা। সব মিলিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন স্থানীয় পান চাষিরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আলগী দক্ষিণ, উত্তর ও চরভৈরবী ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ পানচাষের সাথে জড়িত। পানচাষিরা দিন দিন আশার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু করোনার প্রভাবে পান রপ্তানি বন্ধ ও দাম কম থাকায় পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। অনেক চাষি পানের বরজ ভেঙ্গে অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন তারা।
পানচাষি হযরত আলী গাজীর সাথে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, মহজমপুর, পশ্চিমচর কৃশ্নপুর, ছোটলক্ষিপুর,উত্তর আলগী এসব এলাকায় ব্যাপক পানের আবাদ করা হয়। পূর্ব পুরুষের আমল থেকে তারা পানের চাষ করে আসছেন। তবে বিগত কয়েক বৎসরের তুলনায় এখন পানের দাম খুবই কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে পানচাষিদের। ১ বিরা=৭২টি পান আগে ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হতো, সেই পান এখন মাত্র ৬০-৭০ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি হয়। তবে বাজারে একেকটি পান কিনে খেতে গেলে ঠিকই ৫ টাকা দিয়ে খেতে হচ্ছে। তা হলে আমাদের অবস্থা কী আপনারাই বোঝেন।
অরেক পান চাষি রশিদ গাজী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এ অঞ্চলের ঝাল-মিষ্টি পান শীতের তুলনায় বর্ষায় প্রচুর জন্মে। হাইমচরের ঝাল/মিষ্টি পান চাঁদপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, সৌদি আরব, মালওয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হতো। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। করোনার কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়েছে। বাজারে পানের দাম একেবারে নেই। খরচের তুলনায় পানের বাজার দাম কম, এ কারণে আমরা পান চাষ বাদ দিয়ে অন্যচাষে ঝুঁকছি।
পানচাষি চানমিয়া গাজী, নয়ন গাজী, জয়নাল আবদিন গাজী বলেন, করোনার প্রভাবের কারণে পানে লোকসান গুণতে হয়। এ বছর লাভের আশা করছিলাম। তবে কয়েক দিনের ঘনঘন কুয়াশা আবহাওয়া খারাপ,ও বৃষ্টির কারণে পানের দামই তুলনা মুলক কম। কৃষি কর্মকর্তারাও কোনো পরামর্শ দিতে পারেন না। তাই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার দাবি জানানো হয়। আগে বিদেশে পানের প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর পান বিদেশে পাঠাতে পারছি না। দাম না থাকার কারণে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।
সরকারিভাবে আমাদেরকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরও লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২