দীর্ঘ ৫বছর ধরে চাঁদপুর পৌরসভার পরিশোধিত পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছে শহরের পুরাণ বাজারর পৌর ২নং ওয়ার্ডের প্রায় ৫০টি পরিবার।
ওই ওয়ার্ডের মধ্যশ্রীরামদী আলিয়ার বিল ও ভাওয়াল বাড়ি এলাকার পানির লাইন থাকলেও দীর্ঘ ৫ বছর ধরে তাতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এতে ওই এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবার খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছে। শুধু তাই নয় বিশুদ্ধ খাবার পানির অবভাবে অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার বসত ভিটে ছেড়ে অন্যত্র ভাড়া বাসা করে চলে যাচ্ছেন।
অথচ এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর (১নং প্যানেল মেয়র) বরাবরের মতো শুধু আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নেয়ার জন্য পৌর মেয়রের প্রতি দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা ২নং ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিকেল ৪টায় বাদিয়া বাড়ি খালের উপর নির্মিত মেয়র রোডের ওপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের মধ্যশ্ররামদীর আলীয়ার বিল এলাকার গৃহবধূরা মাথায় ঘোমটা টেনে পানির কলসি হাতে পাশ্ববর্তি এলাকার দিকে ছুটে যাচ্ছেন।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক কলসি খাবার পানির জন্য গত ৫ বছর ধরে এভাবেই তারা পাশ্বর্তি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ধর্ণা দিচ্ছেন। তাছাড়া লোক-লজ্জা ভয়ে তারা খুব ভোরে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে মেঘনা নদীতে গোসল করতে যান এবং ওই সময়ে সাথে নেয়া কলসিতে করে রান্ন, কাপড় ধোঁয়া ও অন্যান্য কাজে ব্যবহিৃত পানি নিয়ে আসেন।
তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, অনেক সময় বিভিন্ন বড়িতে পানি আনতে গেলে বাড়ির গৃহকর্তীরা অশোভন আচরণ করেন। এক কলসি পানি দিয়ে বাড়ির গেইট বন্ধ করে দেন এবং বাড়তি পানি চাইলে গালমন্ধ করেন।
স্থানীয় গাজী বাড়ির বিল্লাল জানায়, তাদের বাড়িতে পৌরসভার পানির সংযোগ থাকলেও গত প্রায় ৫ বছর ধরে ওই পাইপ দিয়ে পানি আসছে না। এ বিষয়ে তারা একাধিকবার স্থানীয় কাউন্সিলর ছিদ্দিকুর রহমান ঢালীর কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তিনি প্রতিবারই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গেছেন।
গত ৫ বছর ধরে কাউন্সিলরের বলে যাচ্ছেন যে, আগামি কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন লাইন বসানো হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা ওনার কথার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল পেলাম না।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম জানায়, ‘শুধুমাত্র পানির অভাবে গত ১ বছরে অনেক পরিবার এই এলাকা ছেড়ে ভাড়া বাসায় চলে গেছে। কারণ পানির জন্য তাদের বাড়ির বৌ-জিঁ (মেয়ে) কে রাস্তায় নামতে হয়। তাছাড়া বাড়িতে পানির কল থাকলেও পানি না থাকায় বাড়াটিয়ার অভাবে বছরের পর বছর ধরে অনেকের ঘর-বাড়ি খালি পড়ে আছে।’
স্থানীয় শেখের বাড়ির বারেক ছৈয়াল চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘মাননীয় মেয়র সাহেবের উন্নয়নের ছোঁয়ায় চাঁদপুর পৌরসভা দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পেয়েছে। চাঁদপুর শহরের সকল রাস্তাঘাট উন্নতি হয়েছে। যার অন্যতম প্রমাণ হলো বাদিয়ার বাড়ির খাল ভরাট করে সুন্দর একটি সড়ক নির্মাণ করা। এ রাস্তাটি হওয়ায় পাশ্ববর্তি এলাকার জামির দামও বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের এতোটাই দূর্ভাগ্য যে এই এলাকা মেয়র বেশি ভোট পেলেও গত প্রায় ৫বছর ধরে আমরা পানি বঞ্চিত রয়েছি। পানির অভাবে বর্তমানে আমরা ১নং ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে বাসা ভাড়া করে থাকছি। মেয়র সাহেবের কাছে আমাদের অনুরোধ তিনি যেন বিষয়টি নজরে এনে একটু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
মধ্যশ্রীরামদী ও আলিয়ার বিল এলাকার তাজুল ইসলাম মিয়াজীর বাড়ি, আলী হোসেন দেওয়ান বাড়ি, রহিম শেখের বাড়ি, মজু খাঁর বাড়ি, কবিরাজের বাড়ি, ফজল বেপারী বাড়ি, শুক্কুর খান বাড়ি, ভোলা মিয়া, কাশিম ছৈয়াল ও ভাওয়ালকান্দিসহ প্রায় ৫০টি বাড়িতেই পৌরসভার পানির সংযোগ রয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ওই এলাকার পনির সংযোগ লাইনটি (পাইপ) সংস্কার অথবা নতুনভাবে না লাগানোর ফলে ওই পরিবারগুলো পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। কিন্তু তাদের পাশের এলাকায় পানির পাইপে নিময় করেই পানির পড়ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ওই এলাকার পানির লাইনটি (পাইপ) অনেক পুরোনো। অচিরেই লাইনটি সংস্কার করা হবে। তিনি বিষয়টি মেয়র সাহেবকে অবহিত করতে বলেন।’
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ১১ :০০ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ