Home / সারাদেশ / পানিতে পচছে ১৪০ কোটি টাকার আলু, কৃষকের চাপা কান্না
পানিতে

পানিতে পচছে ১৪০ কোটি টাকার আলু, কৃষকের চাপা কান্না

মুন্সিগঞ্জে টানাবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির রোপণ করা আলুর বীজ। এসব জমিতে রোপণ করা হয়েছিল প্রায় ২৭ হাজার টন বীজ। পানিতে তলিয়ে যাওয়া আবাদি জমির ১০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বীজ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। এতে ক্ষতির মুখে কৃষকের প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।

এ ক্ষতি দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এতে একদিকে যেমন কৃষকদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন করে আবাদের ক্ষেত্রে বীজ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। বীজের ঘাটতি পড়লে জেলায় এ বছর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ থেকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জামিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছিল। তবে টানাবৃষ্টিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার ছয় উপজেলায় ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে রোপণ করা বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে। রোপণের জন্য প্রস্তুত জমিও নষ্ট হয়ে গেছে।

সূত্রমতে, এবার প্রতি হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয় দুই টন করে বীজ। এরমধ্যে বিএডিসি ও বেশি উৎপাদন সক্ষম বিভিন্ন বাক্স আলু রয়েছে। বিএডিসির বীজ কেজিপ্রতি ২২ থেকে ২৪ টাকা আর বাক্স আলু কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা খরচ পড়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, হেক্টরপ্রতি আলুর বীজ রোপণে খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। এরমধ্যে জমিপ্রস্তুত, সার, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ রয়েছে। সে হিসাবে মোট ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে ১৪০ কোটি টাকা।

তকে কৃষকরা বলছেন, গতবছরের উৎপাদিত আলু থেকে সংরক্ষিত বীজ রোপণে হেক্টরপ্রতি খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। নতুন বাক্স আলুতে খরচ হয়েছে তিনগুণ। অর্থাৎ কৃষকদের হিসাবে এ ক্ষতি দ্বিগুণ হতে পারে।

সদর উপজেলার চরকেওয়ারের কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, ‘এবার মাত্র ১৪ কানিতে (১৬০ শতাংশ) জমিতে বীজ রোপণ করেছিলাম। ২৫ লাখ টাকা খরচে রোপণ করা বীজ পানিতে ডুবে গেছে। দু এক কানি ভালো থাকার সম্ভাবনাও নেই।’

আলুর কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষক আওলাদ মোল্লা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ৫২ শতাংশ জমিতে আলু লাগাইছি। সব আলু নষ্ট হইয়া গেছেগা। নতুন কইরা যে আলু লাগামো তার কোনো সামর্থ্যই আমার নাই। ঋণ কইরা সব করছিলাম, এখন সব শেষ।’

স্বপন সরকার নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘বাড়িঘর বন্ধক রাইখা টাকা দিয়া ক্ষেত করছি। গতবার আট লাখ লোকসান হইছে। এ বছরতো সবই লোকসান। বাড়িঘরও যাওয়ার অবস্থা।’

কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ১৬০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম। এখন নতুন করে বীজও খুঁজে পাচ্ছি না। আট হাজার টাকার বাক্স বীজ আলু এখন ১৩ হাজার টাকা চায়। ডাবল খরচ দিয়া আলু লাগাইয়া লোকসান ছাড়া লাভ আর হইতো না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, খসড়া একটি হিসাবে হেক্টরপ্রতি বীজ রোপণে এক লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। সে হিসাবে কৃষকদের ১৪০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে কৃষকদের হিসাবের সঙ্গে আমাদের হিসাবে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আমরা সরকারি বীজের দামে খরচ ধরেছি। কৃষকরা আরও বেশি দামে বীজ কেনেন।

তিনি আরও বলেন, মাঠ জরিপের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি পুরোপরি নিশ্চিত করা যাবে। আগামী সাতদিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাবটা জানা যাবে। ক্ষতির বিষয়টি বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরে কোনো বরাদ্দ, সাহায্য বা অনুদান পাওয়া গেলে তবে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

প্রতিবেদক: আরাফাত রায়হান সাকিব, ৮ ডিসেম্বর ২০২১