সারাদেশে পাটের আবাদ বেড়েছে। সেখানে বেশির ভাগ পাট কাটা হয়ে গেছে। কিন্তু জলাশয়ের অভাবে এসব পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। সময়মতো পাট জাগ দিতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ১২ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬৭০ হেক্টর বেশি বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র। পাট জাগ দিতে না পেরে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। পাট কাটার পর আবার ধানের আবাদ করা হয়। কিন্তু পাট জাগ দেয়ার মতো পানি না পেয়ে খেতের পাট খেতেই থাকছে। কিছু জলাশয় রয়েছে কিন্তু মাছ ও পানিফল চাষ করা হচ্ছে।
নদী, খালবিল, হাওর-বাঁওড় ও ডোবা-নালাগুলো দেশের প্রাকৃতিক জলাশয়। এগুলো আমাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত। কিন্তু এসব প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দিনে দিনে দখল ও দূষণে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ এসব প্রাকৃতিক জলাশয় অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করছে নানা স্থাপনা। পাট চাষিরা এসব প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাট জাগ দিতেন। এখন জলাশয়ের অভাবে তারা সময়মতো পাট জাগ দিতে পারছেন না বলে আক্ষেপ করছেন।
কৃষকরা যদি আধুনিক ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে অল্প পানিতে অনেক পাট পচানো সম্ভব বলে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন পাট জাগ দেয়ার জন্য পানি সংকট দেখা দিলে সেক্ষেত্রে ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এই পদ্ধতিতে ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। তারপর কাঁচা পাটগাছ থেকে ছাল বা বাকল ছাড়িয়ে নিয়ে অল্প পানিতে পচাতে দিতে হবে। এটা বেশ লাভজনক। পাট পচানোর জন্য বহু দূরে ভ্যানগাড়িতে বহন না করে জমির একপাশে গর্ত করে এ পদ্ধতিতে পাট পচানো যায়।
তবে ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে পাট পচানোর ব্যাপারটি এখনো অনেক কৃষক জানেন না। আবার তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে অভ্যস্তও নন। তাই এটার প্রচার-প্রচারণা চালানো দরকার। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি প্রচারের মাধ্যমে এই পদ্ধতির সুবিধাগুলো কৃষকদের মাঝে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে পাট জাগ দেয়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সমস্যার কথা শোনা যায় সেটা আর থাকবে না।
তবে, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাতক্ষীরা জেলায় দখল-দূষণে যেসব জলাশয় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে, তা দখলমুক্ত করে খননের উদ্যোগ আনতে হবে। জলাভূমি সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলে একদিকে মানুষের চাহিদা পূরণ হবে আবার কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজও সারতে পারবেন।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১৯ আগস্ট ২০২৪