কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গণনা শেষে টাকার এ হিসাব পাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ টাকা ছাড়াও দান হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ অক্টোবর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ১ দিনে দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল ১৫ বস্তা টাকা। দিনভর গণনা শেষে ১৫ বস্তায় পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। এ ছাড়া আরও জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ সকালে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে ১০টি বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় গণনা। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টাকা গণনা হয়। এই কাজে মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নেন।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানবাক্সগুলোতে টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করেন।
টাকা গণনা কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে এবার রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। টাকা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলার, সৌদি রিয়াল, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বর্ণালংকার পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়েছে।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদের অবস্থান। প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এই মসজিদ কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও কবরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তা করা হয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজেও এই ফান্ড থেকে টাকা খরচ করা হয়।
কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে বাংলার বারোভূঁইয়া বা প্রতাপশালী ১২ জন জমিদারের অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে ‘দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা’ নামের একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তী সময়ে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। সেই থেকে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের মানুষের আবেগের জায়গা। অনেক মানুষই বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণের জন্য এখানে দান করেন। ছয়তলা পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণে টেন্ডারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ১২টি টেন্ডার আমরা পেয়ে পরামর্শকের কাছে পাঠিয়েছি। মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক কাজ শুরু করার মতো টাকা রয়েছে।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ৭ জানুয়ারি ২০২৩