পাকিস্তানে টিকা ‘পাচ্ছেন না’ কয়েক লাখ বাঙালি

অনেকে দীর্ঘদিন পাকিস্তানে বসবাস করছেন, কারো আবার জন্মই সেখানে; তবু তারা করোনাভাইরাসের টিকা পাবেন না। দেশটিতে বসবাসরত এমন অনেক অভিবাসী যাদের মধ্যে কয়েক লাখই বাঙালি-এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে বিপদে পড়েছেন নাগরিকত্ব বা সরকারি পরিচয়পত্র না থাকার কারণে।

দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ডনের একটি প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানে এই মুহূর্তে সেদেশের মানুষেরাই শুধু টিকা পাচ্ছেন; অথবা যাদের কম্পিউটারাইজড ন্যাশনাল আইডেনটিফিকেশন কার্ড (সিএনআইসি) আছে; অথবা যাদের শরণার্থী বিষয়ক পরিচয়পত্র রয়েছে। টিকার জন্য ‘অবশ্যই’ সবাইকে সিএনআইসি দিয়ে সরকারি ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হচ্ছে।

পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় যা অনেক কম।

পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী যান আফগানিস্তান থেকে। দেশটিতে ১৫ লাখ আফগানের কোনো পরিচয়পত্রই নেই। সেখানে মোট ২৮ লাখ আফগানের বসবাস।

আফগানদের পাশাপাশি পাকিস্তানে অনেক বাঙালি, নেপালি এবং রোহিঙ্গা বসবাস করেন। এই মানুষদের অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে করাচির সুবিধাবঞ্চিত এলাকায়।

দেশটিতে ঠিক কত বাঙালির বসবাস, সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে গত এপ্রিলে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের একটি ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে ৩০ লাখের মতো বাঙালি আছেন! পরিচয়হীনতার কারণে পরিবারগুলোর শিশুরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক বাঙালি অ্যাথলেট আছেন, যারা ভালো করলেও পরিচয়হীনতার কারণে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন না।

নেই বিকল্প উপায়ও: পরিচয়পত্র না থাকা এই মানুষদের টিকা নেয়ার অন্য কোনো উপায়ও এখন পর্যন্ত রাখা হয়নি। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এ বিষয়ে একটা তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে তারা বিকল্প উপায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল, কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি।

শুধু বলা হয়েছে, শরণার্থীরা প্রুফ অব রেজিস্ট্রেশন (পিওআর) দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। কিন্তু যাদের পিওআর নেই, তাদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই কর্মকর্তা।

পাকিস্তানের চিকিৎসকদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন পিএমএ বলছে, টিকার জন্য যে নিবন্ধন পদ্ধতি করা হয়েছে, সেটি বিপজ্জনক। লাখ লাখ মানুষ এখন টিকা নিতে পারবেন না।

সংগঠনটির মহাসচিব কায়সার সাজিদ বলছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি টিকা নিতে এই অপ্রয়োজনীয় পদ্ধতির দরকার নেই। বর্তমান সিস্টেমের কারণে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ টিকা নিতে পারবেন না।’

দেশটির শরণার্থী বিষয়ক প্রধান কমিশনার সেলিম খান বলছেন, ‘যাদের পিওআর নেই, তাদের জন্য সরকারের কিছু করার নেই! তবে এখনো শরণার্থীরা নিবন্ধন করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা পরিচয়হীন। এদের জন্য তো কিছু করার নেই!’

 

আন্তজার্তিক ডেস্ক, ২২ মে ,২০২১;

Share