প্রবাসী আফজাল হোসেন। সৌদিতে কর্মরত ছিলেন প্রায় ১৫ বছর। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে এসেছেন। ২৮ এপ্রিল ফিরে যাওয়ার কথা। করোনার কারণে যেতে পারেননি। পরে দুই দফা ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু বিমানের টিকিট না পাওয়ায় এখন তার সৌদি যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আফজাল বলেন, কুমিল্লা থেকে এসেছি। চারদিন ধরে বিমানের অফিসে আসছি। টিকিট কনফার্ম হয়নি। বিমান কর্তৃপক্ষ জানায় ৩০ সেপ্টেম্বর যাদের ছুটির মেয়াদ শেষ হবে তাদের টিকিট দেয়া হবে না। ছুটির মেয়াদ বাড়াতে পারলে টিকিট দেবে। ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দুদিন ধরে কপিলকে (ওই দেশের মালিককে) ফোন দিচ্ছি। ফোন ধরছে না। আমরা ওই দেশে কাজ করি। মালিককে কিছু বলতেও পারি না। চাইলেই কি ছুটির মেয়াদ বাড়াতে পারবো। এখন সরকার যদি আগের মতো ছুটির মেয়াদ না বাড়ায় তাহলে সৌদি যেতে পারবো না।
সৌদিতে না যেতে পারলে দেশে কী করবো। এখানে তো কাজ নেই। আজকে পাঁচ মাস ধরে বসে আছি এক টাকাও ইনকাম নেই। উল্টো যে টাকা এনেছি তা বসে খেয়ে এখন ধারদেনা করে চলছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবাসী আফজাল বলেন, আমার পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকায় পরিবার চলে, দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। এখন আমরা সমস্যায় পড়েছি, সরকার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে কীভাবে চলবো। সৌদি না যেতে পারলে দেশে বেকার থাকতে হবে। সামনে তো সব অন্ধকার দেখছি।
আফজালের মতো আরেক প্রবাসী চট্টগ্রামের কাইয়ুম। প্রায় ২০ বছর সৌদির জেদ্দায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
তিনি জানান, ৫ মার্চ বাংলাদেশে এসেছেন ১৫ জুন ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু লকডাউনের কারণে যেতে পারিনি। এখন ছুটির মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। গত তিনদিন অপেক্ষা করে আজকে বিমানের অফিসের ভেতরে ঢুকতে পেরেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। ছুটি বাড়াতে না পারলে টিকিট দেবে না।
আব্দুল কাইয়ুমদের মতো শত শত সৌদিপ্রবাসী তিন-চারদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিলে বিমান এয়ারলাইন্সের অফিসের সামনে ভিড় করছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোর থেকেই প্রবাসীরা ভিড় করেন মতিঝিলের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অফিসে।
দুপুরে সরেজমিনে প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ১০টার কিছু পরে শুরু হয় বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম। গেট খোলার পর হুড়মুড় করে বিমান অফিসে প্রবেশ করেন অন্তত হাজার খানেক প্রবাসী। এরপর গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে আরেক দফা গেট খুলে দেয়া হয়। তবে বেশির ভাগই টিকিট পাচ্ছে না। কারণ তাদের ভিসা ও ছুটির মেয়াদ নেই।
প্রবাসীরা জানান, সৌদি দূতাবাস থেকে জানানো হলো নির্ধারিত এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এজেন্সি বলছে, সৌদির কফিলের (মালিক) কাছ থেকে ছুটি ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতিসহ নানা কাগজপত্র লাগবে। একজন শ্রমিকের পক্ষে কী মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাগজপত্র আনা সম্ভব।
বিমানের অফিস থেকেও একই কথা বলা হচ্ছে ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে কাগজপত্র আনার জন্য। এটি বলাটা যতটা সহজ করাটা তত সহজ নয়? আমরা ওই দেশে কাজ করি। কামলা খাটি। বললেই কী মালিক ছুটি বাড়িয়ে কাগজ দেবে। যেখানে সরাসরি গিয়ে ছুটি পাওয়া যায় না। সেখানে আমরা দেশ থেকে কীভাবে ছুটি আদায় করব। বাস্তবতা অনেক কঠিন। সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যাদের ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের বেশিরভাগ আর সৌদি যেতে পারবে না। আমাদের দাবি আগের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবার ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হোক।
এদিকে বিমান অফিস জানিয়েছে, প্রথমে ১৬ মার্চ বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টিকিট রি-ইস্যু করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত তারিখ ধরে ধরে সিরিয়ালি টিকিট রি-ইস্যু করা হবে। এ জন্য পূর্বের টিকিট পাসপোর্ট সৌদি আরব কর্তৃক অ্যাপসের অনুমোদন কপির সঙ্গে আনতে হবে।