ফিচার

পহেলা বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

সময়টা পহেলা বৈশাখের আগের দিন রাত। নাজনীনের মন অনেক খারাপ; সে দুপুরের খাবারও খায়নি, রাতে মটকা মেরে বসে আছে উঠোনের এক কোনায়। নাজনীন ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। পশ্চিমা কালচারের সাথেই তার চলাফেরা। যাকে আমরা ওয়েস্টার্ন কালচার বলি; নাজনিনের তাই পছন্দ।

এক প্রকার তার অমতেই তার বাবা-মা তাকে পহেলা বৈশাখের ছুটিতে দাদার বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে এসেছেন। নাজনীনের মন খারাপ কারণ সে বৈশাখের হৈ-হুল্লোড় মাতামাতি থেকে বঞ্চিত; কিন্তু বিষয়টি কাউকেই বুঝতে দেয়নি। তার সমবয়সী চাচাতো বোন তাবাসসুম তমা গ্রামের একটি কলেজে পড়ে; কেন নাজনীনের মন খারাপ বিষয়টি সে বুঝতে পেরেছে। তমা তার জেঠাতো বোনের কাছে জানতে চায় বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে সে কি জানে।

জবাবে নাজনীন জানায়, ‘আমরাতো এই দিনে অনেক মজা করি ভার্সিটিতে; সকালে পান্তা ইলিশ, বিভিন্ন প্রাণির মুখোশ পরে র‌্যালি, গান, ড্যান্স বন্ধুরা মিলে আরো কত মজা করি। আমাদের পাড়ায়ও অনেক মাস্তি হয়। দিনটি আমরা অনেক উপভোগ করি।’

তমা বুঝতে পারে নাজনীন বাঙ্গালী ঐতিহ্য থেকে পিছিয়ে আছে। তমা তার জেঠাতো বোনকে তার দাদু ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায় এবং বিষয়টি বিস্তারিত বলে। দাদু ভাই তার নাতি-নাতনি সবাইকে নিয়ে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে উপস্থাপন করেন- প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক জাতির নিজস্ব একটা ঐতিহ্য রয়েছে; রয়েছে তার নিজস্ব সংস্কৃতি।

পহেলা বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি। এটি আমাদের নিজস্ব সম্পদ, আমাদের অহঙ্কার আমাদের গর্ব; যার ফলে এ দিনটি আমরা উচ্ছ্বাসের সাথে প্রতি বছর-ই পালন করে থাকি। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয় আর এ আপন করে নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভূতি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশী ও বাঙালি জাতি হিসেবে, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের এমন একটি উৎসব হল পহেলা বৈশাখ।

আমাদের এ সংস্কৃতিকে অনেকেই হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলে অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। আধুনিকতার নামে বেহায়াপনা নোংরামি দিয়ে আমাদের এ উৎসবকে কলঙ্কিত করতে চায়। অপশক্তির এ আশা অতীতে কখনো পূরণ হয়নি ভবিষ্যতেও হবে না। যত দিন বাঙ্গালি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই দিনটির ঐতিহ্য নিয়ে; আলোচনা করবে জানতে চেষ্ট করবে এ দিনটির সম্পর্কে।

ইতিহাস বলে, যার হাত দিয়ে বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তন হয়েছে তিনি কেবল মুসলমানই ছিলেন না বরং সারা মুসলিম বিশ্বে একজন নামকরা, উদারপন্থী শাসক হিসেবে আজও পরিচিত তিনি হচ্ছেন সেই জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবর যিনি আমদের কাছে; বর্তমান প্রজন্মের কাছে স¤্রাট আকবর নামে পরিচিত।

আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বছর সৌর বছরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল স¤্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সম্রাট আকবার তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে স¤্রাট আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।

মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত: রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল।

যে দিন বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম মাস হয়ে এলো সেদিন হতেই বৈশাখের আনন্দটি নবান্নের আনন্দের চেয়েও আরও বড় আলাদা আঙ্গিক পেতে শুরু করে। মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বৈশাখেই ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান চালু করেন। হালখাতা হলো যে বছরটি চলে গেল সেই বছরের হিসাবের যোগ বিয়োগ করে পুরনো খাতাটি তুলে রেখে নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন খাতায় হিসাব চালু করা। আমার ব্যাবসায়ী দাদা বলতেন, লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো নতুন এই হিসাব খাতায় উপরে লেখা হতো ‘এলাহী ভরসা।’ এই এলাহী শব্দটিও স¤্রাট আকবরের ‘তারিখ ই এলাহী’ থেকে এসেছে বলে জানা যায়।

বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । বাংলা মাসের এই নামগুলো হচ্ছে বৈশাখ- বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, জ্যৈষ্ঠ- জ্যৈষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, আষাঢ়- উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে, শ্রাবণ- শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, ভাদ্র- উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে, আশ্বিন- অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে , কার্তিক- কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, অগ্রহায়ণ- মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, পৌষ- পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, মাঘ- মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, ফাল্গুন- উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে, চৈত্র- চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে। স¤্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।

বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে ঃ সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে, মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে, বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে, বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে, শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে, শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে, রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে।

বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে। ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।

সন একটি আরবি শব্দ। পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা আনকাবুত এ সানা বা বছর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে এই সানা শব্দের পরিবর্তিত রূপই সন। আর সাল শব্দটি উর্দু ও ফার্সী ভাষায় ব্যবহৃত হয়। বাংলায় সনকে অব্দ বা সাল নামে অভিহিত করা হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন ।

বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হযয়েছে। এ প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি।

ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় যে, আগে বৈশাখের নানা ধরনের পিঠা-ফুলি তৈরি হতো। গায়ে গানের আয়োজন হতো মাইকে বাজতো গাও গ্রামের গান। চৈত্রের শেষ দিনে গাঁয়ের বধূরা বাড়ি ঘর পরিষ্কার করে। বিশেষ করে পানিতে মাটি ছেনে ঘরের ভেতরে ও আঙ্গিনায় লেপে দিতো। উঠান ঝকঝকে পরিষ্কার করে রাখতো। এখনো হয় তবে অনেক কম। এখন কেন জানি কাজের মাঝে কৃত্রিমতা আর লোক দেখানো।

‘মৈমনসিংহ গীতিকা’য় বাংলা নববর্ষের আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে ‘আইল নতুন বছর লইয়া নব সাজ, কুঞ্জে ডাকে কোকিল-কেকা বনে গন্ধরাজ”। মোটামোটি ভাবে এই হল আমাদের বাঙালী ঐতিহ্য, এটাই হল আমাদের বৈশাখের ঐতিহ্য। কঠিন বাস্তবতা, সমাজে করুণ-কঠোর বিভাজন। তীব্র নিপীড়নের রাষ্ট্রে আজ যা কিছু উল্লেখযোগ্য, তার সবটাই মানুষের জন্য গ্লানির। উগরে দিতে চাইছে, কিন্তু পারছে কই!

যখন নববর্ষ বরণের ‘উৎসব’, তখন গোটা দেশে ঘুরে ফিরে যে শব্দগুলো আসছে তা হলো- গুম, খুন, গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ার, সহিংসতা, পুলিশ, গুলি, নিহত, আগুন, তা-ব, ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিষোদগার আর দীর্ঘশ্বাস।

ঘরে-বাইরে, ব্যবসায়, লেনদেনে, সম্পর্কে দীর্ঘশ্বাসের দীর্ঘলাইন। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ কারাগারে। পরিবারে আকাল। উৎকণ্ঠায় পার হচ্ছে রাত, কে এসে ডেকে নিয়ে ফেরত দিচ্ছে সন্তানের লাশ। উঁকি দিচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতার শকুন। এই বুঝি ছোবলে ধ্বংস করে দিবে শান্তির পতাকা।

যেকোনো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সহ¯্র প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে, রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতার মাঝেও আমাদেরকে মাতিয়ে তোলে বর্ষবরণ উদযাপনে । জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলা নববর্ষে উপভোগ করে। ‘রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি, আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ, মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।’ দাদু ভাইয়ের কাছ থেকে বৈশাখের ইতিহাস জানতে পেরে সবাই খুশিতে আত্মহারা।

নাজনীনেরও মনটা ভরে গেলে; সে শপথ নিলো আর কখনো বেহায়াপনার সাথে বৈশাখকে জড়াবেনা। এখন থেকে বৈশাখ পালন করবে নিজের সংস্কৃতিতে নিজের মতো করে যেভাবে পালন করেছিল আমাদের পূর্ব পুরুষরা। বৈশাখ বয়ে আনুক সবার জীবনে শান্তির পরশ; স্থিতিশীল হোক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থা। অধিকার ফিরে পাক বঞ্চিতরা। অত্যাচার, নিপীড়ণ, নির্যাতন থেকে মুক্তি পাক মানবতা। পূরণ হোক বৈশাখের প্রত্যাশা।

লেখক পরিচিতি : মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল,
নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর দিগন্ত।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫

Share