প্রতিবছরের মতো এবারও সিলেটের মানুষের পরিকল্পনা সকালে ঈদের নামাজে যাওয়া, ফিরে এসে পশু কোরবানি দেওয়ার। কিন্তু বানের জলের মতো হু হু করে ঘরে ঢুকে পড়া পানির শব্দে ঘুম ভাঙার পর দুর্ভোগের এক ঈদের ভোর আসে তাদের জন্য। ঈদের আমেজের বদলে জান-মাল আর কোরবাানির পশু রক্ষায় কেটে যায় দিনের অর্ধেক। পানিতে ভাসতে থাকায় অনেকে কোরবানি দেওয়া স্থগিত রেখেছেন।
আবার কেউ কেউ বিকেলে পানি নেমে যাওয়ার পর পশু কোরবানি দিয়েছেন।
সোমবার (১৭ জুন) বিকেলে নগরের শিবগঞ্জ, খাঁরপাড়া, উপশহর, দরগামহল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নগরের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পশু কোরবানি দেওয়া এক দিন পিছিয়েছেন, আবার কেউ কেউ পানি নেমে যাওয়ায় বিকেলের দিকে কোরবানি দেন।
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় বিকেল ৫টার দিকে ঘুরে দেখা গেছে, উপশহরের বেশির ভাগ ব্লকে পানি নেমে গেছে।
পানি নামায় সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে কোরবানি দিয়েছেন। অনেকে কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দিনের প্রথম ভাগে নগরের ডুবে থাকা এলাকাগুলোর চিত্র প্রায় একই।
কথা হয় নগরের খাঁরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবী প্ল্যাটফরম সেভ সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা ড. আয়ান মমিনুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ভোরের আগেই আমাদের এলাকা পানিতে ডুবে যায়। দুপুর দেড়টার সময়ও পানি ঘরের ভেতর এক ফুটের মতো আর উঠান দুই ফুটের বেশি পানিতে ডুবে ছিল। যে কারণে কোরবানির চিন্তা বাদ দিয়ে ঘরের আসবাবপত্র ও কোরবানির পশু রক্ষার চিন্তা করতে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজ কোরবানি দিচ্ছি না। যদি দিন ভালো থাকে তাহলে আগামীকাল মঙ্গলবার দেব।
’
এদিকে ভারি বর্ষণ ও বজ্রপাতের কারণে সিলেট নগরের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। নগরের শাহী ঈদগাহ ময়দানে প্রধান ঈদের জামাতেও অন্যান্য বছরের তুলনায় উপস্থিতি কম দেখা গেছে। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক হাজার মানুষ সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনদের অনেকে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল রবিবারের তুলনায় আজ সোমবার সিলেট জেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদীর পানি বেড়েছে। তবে আজ সকালের তুলনায় সন্ধ্যায় নদীর পানি সব পয়েন্টে কমেছে।
সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে জৈন্তাপুরের সারি পয়েন্টে সারি নদীর পানি সকালে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যার প্রতিবেদন অনুযায়ী তা কমে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাকি পয়েন্টগুলোর মধ্যে সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদী, কানাইঘাটে লোভাছড়ায় লোভা নদী, জাফলং পয়েন্টে ডাউকি নদী, জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে সারি নদীর পানি সকালের তুলনায় কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে আজ সকাল ৬টা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায়ই বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৭ জুন ২০২৪