জাতীয়

পল্লি চিকিৎসকের আনাড়ি ‘অপারেশন’ : মৃত্যু পথযাত্রী কিশোরী

“এভাবে অপারেশন করা আইন পরিপন্থী ও অমানবিক। ওই চিকিৎসক নামধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হাতুড়ের ‘অস্ত্রোপচারে’ গুরুতর অসুস্থ’ এক কিশোরীকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

গাইবান্ধা উপজেলার বাদিয়াখালি ইউনিয়নের চকবরুল গ্রাম থেকে নূরজাহান খাতুনকে (১৭) উদ্ধারের কথা জানান গাইবান্ধা সদর থানার উপ-পরিদর্শক রাকিব।

নূরজাহান চকবরুল গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে পাশের সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর গ্রামের আমিরুল ইসলামের সঙ্গে নুরজাহানের বিয়ে হয়। তার তিন বছর বয়সের একটি সন্তান রয়েছে।

ঘটনার পর থেকে কথিত ওই চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। সিরাজুল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের সিংড়া মধ্যপাড়া গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে।

নুরজাহানের পরিবার ও এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে এসআই রাকিব বলেন, টনসিলের চিকিৎসা নিতে কিছুদিন আগে বাবার বাড়ি আসেন নূরজাহান। মেয়ের চিকিৎসার জন্য নূরজাহানের বাবা গ্রামের ‘পল্লি চিকিৎসক’ সিরাজুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

“সিরাজুল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নুরজাহানের বাড়ি যান এবং বাড়ির আঙ্গিনায় বসেই টনসিল অপারেশন শুরু করেন। নুরজাহানের জিহ্বা টেনে ধরে কাঁচি দিয়ে তার টনসিল কাটেন।”

অপারেশনের পর নুরজাহানের গলা দিয়ে রক্তক্ষরণ হলেও সিরাজুল তাকে হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেন বলে ওসি জানান।

ওসি আরও বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ওইদিনই নূরজাহানদের বাড়ি যায়। তবে পরিবারের লোকজন এ ঘটনায় অভিযোগ করতে না চাইলে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ফিরে আসে।

কথিত চিকিৎসক সিরাজুলের পরামর্শে ঘটনার দিন থেকে তাকে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তিনদির পর বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে বলে জানান তিনি।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, “আমি অসুস্থ নুরজাহানকে দেখেছি। তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়নি। টনসিলের উপরের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

“এভাবে অপারেশন করা আইন পরিপন্থী ও অমানবিক। ওই চিকিৎসক নামধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অসুস্থ নুরজাহানের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি অনেকদিন ধরে এসব কাজ করছি। কোনো সমস্যা হয়নি। অনেক রোগী ভালো হয়েছে।”

সার্জারি বিভাগে আপনার পড়াশোনা কিংবা কোনো সনদপত্র আছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “নেই। আমাকে সবাই ডাকে, তাই আসি।”

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০২:১৪ অপরাহ্ন, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার

এমআরআর

Share