অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদীবিধৌত এক জনপদ হাইমচর। হাইমচরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে মেঘনা নদী। এই মেঘনা নদী ছিলো হাইমচরবাসীর দুঃখ দুর্দশার সমর্থক শব্দ। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর-হাইমচর) এর মাননীয় সাংসদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা দীপু মনি এমপি প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে হাইমচরের অস্তিত্ব রক্ষা করেন।
গত ১৩ বছরে হাইমচরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধনের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
যে মেঘনা নদী হাইমচরবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম ছিলো, আজ তা হাইমচরবাসীর কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সময় পেলেই পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটে যান আনন্দ ভ্রমণে, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউবা দুচোখ মেলে হারিয়ে যেতে চান নদীর বিশালতার মাঝে।
ভৌগলিকভাবে মাত্র ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে হাইমচর উপজেলা গঠিত হয়েছে। মানচিত্রের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে ৪টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে আলগী উত্তর ইউনিয়নের কাটাখালি থেকে দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রাম পর্যন্ত মেঘনা নদীর পাড়টি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য অনেক সম্ভাবনাময় স্থান। শুধুমাত্র একটি মেরিন ড্রাইভ, খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারলে সহসাই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই স্পটটি। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে বহু লোকের। বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবে বহু মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেঘনার পাড়ে চরভাঙা নামক স্থানে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে স্কাউটের বার্ষিক জাতীয় অনুষ্ঠান ‘কমডেকা’র উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এসেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐ সময়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী মেঘনার পাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক মেরিন ড্রাইভ আকারে ইট দিয়ে তৈরি করেন।তবে, বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ায় ও ঢেউয়ের কারণে ওই সড়কটি এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ঐসময় সড়ক তৈরি করে স্টিলের রেলিং তৈরি করে দেওয়ায় কিছু মানুষ ভ্রমণে আসতে শুরু করে। তখনই এই স্থানটি নজরে আসে ভ্রমণপিপাসুদের। চরভাঙা গ্রামের মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় এক যুবক নিজ উদ্যোগে বেশ কয়েকটি ছাতা ও চেয়ার দিয়ে বসার ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে তিনি একটি চটপটির দোকান দিয়েছেন। বিকেল হলে স্থানীয় বিভিন্ন বয়সীর লোকজন এখানে আসেন ও সময় কাটান।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘনা পাড়ের চরভাঙা এলাকা সফর করার সময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন এবং পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন পাশাপাশি চরাঞ্চলকে অর্থনৈতিক জোন করার ঘোষণা দেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কাজ এগিয়ে চলছে। তবে, পর্যটন এলাকা করার জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগের বিষয়ে আমরা জানতে পারিনি।
নদী তীরবর্তী এলাকার হাবিব মিয়া বলেন, মেঘনা পাড়ের এই বৈচিত্রময় দৃশ্য যেকোনো মানুষের মন কাড়ে। দিনের বেলায় এক দৃশ্য , বিকেলে সূর্যাস্তের সময় আরেক দৃশ্য ধারণ হয় মেঘনার পাড়ে। রাতের বেলা জোৎস্না থাকলে নদীর পাড় থেকে উঠে আসতেও মন চাইবে না পর্যটকদের। তিনি আরও বলেন, কাটাখালি থেকে চরভাঙা পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার। এই স্থানটিতে মেঘনা পাড়ে মেরিন ড্রাইভ করা হলে খুবই চমৎকার হবে। কারণ এসব এলাকায় প্রবেশ করার জন্য বহু সংযুক্ত সড়ক এখন পাকা হয়েছে এবং এখানে অনেক পানবরজ ও সুপারির বাগান রয়েছে। এসব দৃশ্যও খুবই মনোরম। সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থা যারা এগিয়ে আসবে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই লাভজনক হবে। একইসঙ্গে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতিসহ অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
উপজেলার লামচরী এলাকার সমাজকর্মী ইমরান হোসেন বলেন, মেঘনার পাড়ের মৎস্য আড়তগুলোতে বছরে কম-বেশি ইলিশসহ নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পর্যটন এলাকা গড়ে তুললে আগত ভ্রমণপিপাসুরা তাজা মাছের স্বাদ নিতে পারবে। এখন শুধুমাত্র পরিকল্পনা করে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পর্যটন এলাকা করার পরিকল্পনা করেই আমরা প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক মেঘনার পাড়ে ইট দিয়ে পাকা করেছি। কিন্তু পানির স্রোত ও মেঘনার ঢেউ সড়কটি ভেঙে গেছে। পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং সে আলোকে কাজ করছি। মেঘনার পাড়ে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে দেশের যেকোনো স্থানের মানুষ এখানে এসে খুবই চমৎকার সময় কাটাতে পারবে।
প্রতিবেদক: মো. ইসমাইল, ১০ নভেম্বর ২০২১