সম্পাদকীয়

পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের প্রয়োজন

৫ জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’। বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপি রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত হয়ে আসছে। এ দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স শুরু হয়েছিল ।

এ কনফারেন্স ১৯৭২ সালের ৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে ঐ বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। তখন থেকেই প্রতি বছর এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৩ সালে।

প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে,আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়ে আসছে। প্রকৃতিগত কারণে উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন ও প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশন ও জ্বালানী ব্যবহারের ফলে দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এবং জলবায়ু।

যার ফলাফল স্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের বেশ ক’টা জেলা সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছুটা জায়গা,বাংলাদেশ,মালদ্বীপ আর শ্রীলংকাসহ পৃথিবীর নিম্নভূমির দেশসমূহ জলবায়ূর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় শিকার হতে পারে । পরিবেশ রক্ষায় তথা পৃথিবী রক্ষায় আজ প্রয়োজন সচেতন উদ্যোগ।

এছাড়াও পারিবারিকসহ দেশের প্রতিটি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,যখন তখন গাছ কাটা বন্ধ রাখা, বেসামাল স’মিল গুলো নিয়ন্ত্রণ রাখা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া নির্গমন বন্ধ রাখা,পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধ করা,কল কারখানায় যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখা,ওয়েল্ড্রিং,সাবান,রং,
ট্রেনারি শিল্প কারখানা ও হাসপাতালের বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ করতে না দেয়া ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া,নদী,খাল,বিল পুকুর ও ডোবা পানি দূষণ মুক্ত বা ভরাট বন্ধ রাখা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্যে মাত্ররিক্ত ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর রিরূপ ওপার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও দেখা দিয়েছে। তা্ই পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ প্রয়োজন ।

এসব কারণে আমাদের জীব-বৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। দেশের নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে মৎস্য সম্পদ ও কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে। জলবায়ূ পরিবর্তনে এখনই মানুষের নানা রোগ বালাই দৃশ্যমান হচ্ছে।

আমাদের দেশ প্রকৃতির লীলাভূমি । যে কটি বন রয়েছে তম্মধ্যে সুন্দর বন একটি । সুন্দরবনসহ ৪০ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিপন্ন,অতিবিপন্ন বা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বন বিনাশ, পিটিয়ে মারা,শিকার,বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রাক্ত, পর্যাপ্ত খাবার ও প্রাকৃতিক বন্যা,মহামারি, দুর্যোগ,ঘূণিঝড় ও আশ্রয়ের অভাব ও আগুন লাগিয়ে বন উজাড় হওয়াতে এ সব প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।

পৃথিবীর বৃহত্তম ৩টি ম্যানগ্রোভ এর মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি । এর আয়তন ১০ হাজার কি.মি.। আর বাংলাদেশের অংশে রয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কি.মি.। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বনে ২ শ’৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর আবাস্থল।

এর আশ-পাশের লোনা পানিতে রযেছে হাঙ্গর, কুমির, ডলপিন ও ২ শ’৫০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ সব প্রাণীকূল ও জীব বৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। জলবায়ূর পরিবর্তন পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ওপর রিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। এছাড়াও বায়ু দূষণ,শব্দদূষণ,পানি দূষণ প্রভৃতি দূষণে জনজীবন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। সুতরাং পৃথিবীকে বসবাস যোগ্য করে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সচেতনতা ।

সম্পাদকীয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭: ৩০ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯, রোববার
এজি

Share