বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের যে জট তৈরি হয়েছে তা এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নিরসনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে এ পরীক্ষার নিয়ম কানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম।
৪৪ থেকে ৪৭তম বিসিএসের কার্যক্রমের জট কমার বিষয়ে আগামি কয়েক মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে কমিশন কোনো পরীক্ষা পেছানোর চিন্তা করছে না।
বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল বিকালে পিএসসির সভা কক্ষে ব্রিফিংয়ে কথা বলছিলেন পিএসসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪৭তম বিসিএস এক বছর বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বর্তমানে ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা চলছে, যাতে প্রার্থীরা আবেদন করেন তিন বছর আগে ২০২১ সালে। সম্প্রতি ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হলেও এখনও ফল প্রকাশ হয়নি।
আর আগামী ৮ অগাস্ট ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে পিএসসি। এ চার বিসিএসের জট নিরসনের দাবি জানিয়েছে আসছেন প্রার্থীরা।
সরকার পতনের পর নবগঠিত কমিশনের বিসিএস নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার বিষয়ে তুলে ধরতে গিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনকে পরীক্ষার্থীবান্ধব করার লক্ষ্যে কর্ম কমিশনের সাথে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অংশীজনের ভাবনা শীর্ষক কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে বিসিএসের পরীক্ষা সংস্কারের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
”প্রশ্নকারক পূর্বে প্রশ্ন প্রস্তুত করে এনে জমা দিতেন। বর্তমানে পিএসসিতে এসে প্রশ্ন প্রণয়ন সম্পন্ন করেন। ফলাফল প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে ব্যবহৃত লিথোকোড ফর্মের ডিজাইন ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সংস্কার আনা হয়েছে। উত্তরপত্র পরীক্ষণের স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্কুলার সিস্টেম চালু করা হবে।“
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে নতুন ব্যবস্থা চালু হতে যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, কমিউনিটিভিত্তিক পরিদর্শন পদ্ধতি চালু করা হবে। ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ উত্তরপত্র তৈরি করা হবে। প্রক্সি পরীক্ষার্থীদের প্রতিরোধে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে যাচাই করা হবে।
ক্যাডার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান পদ্ধতিতে বদল আনার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ভাইভার আগে ক্যাডার বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়া হবে।
“এখন একটা বিসিএস এর কার্যক্রম শেষ হতে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময় লাগে। এ সময়ে অনেকের পছন্দ পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভাইভার আগে ক্যাডার চয়েস দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। ৪৭তম বিসিএস থেকেই ভাইভার আগে ক্যাডার চয়েস পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে।”
বিজিপ্রেসে আর বিসিএসের প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না,এমন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আরও নিরাপদ প্রেসে প্রশ্ন ছাপাব।”
২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের আগে প্রণয়ন করা সব প্রশ্ন এরইমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল না করে আরও ১০ হাজার পরীক্ষার্থীকে কেন উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হল-এমন প্রশ্নে পিএসসির সদস্য মো.সুজায়েত উল্যা বলেন,”৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগ সিআইডি তদন্ত করছে এবং তদন্ত শেষে প্রশ্ন ফাঁসের অবৈধ সুবিধাভোগী প্রার্থীরা অবশ্যই শনাক্ত হবে।
‘শনাক্তের পর সেসব প্রার্থীর বিসিএস পরীক্ষার নির্বাচন প্রক্রিয়ার যে পর্যায়েই থাকুক না কেন তাদের পরীক্ষার ফলাফল বাতিলসহ সকল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকবে। কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলের পরীক্ষা বাতিল করা হলে বহু নির্দোষ পরীক্ষার্থীর মূল্যবান সাফল্য হাতছাড়া হয়ে যাবে ও অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। এবং এর ফলে তাদের যে ক্ষতি হবে তা পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে।”
বিসিএসের সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে সদস্য মো. নাজমুল আমীন মুজমদার বলেন, “৪৮তম বিসিএস বিশেষ বিসিএস হলে ৪৯তম বিসিএস থেকে সিলেবাস পরিবর্তন করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিভিল সার্ভিসের সিলেবাস সংগ্রহ করে গবেষণা করা হচ্ছে।”
২৫ এপ্রিল ২০২৫
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur