গোপালগঞ্জের ভোজেরগাতি গ্রামে ভালোবাসার টানে নিজের দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় মা জান্নাতুল ফেরদৌস কুলসুমের কথিত প্রেমিক সাহেব আলী ওরফে রানাকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে মাদারীপুর শহরের পুরাণ বাজার এলাকার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) সওগাতুল আলম জানান, দুই ছেলে হত্যার প্রধান আসামি মা জান্নাতুল ফেরদৌস কুলসুমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদারীপুরে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় প্রেমিক সাহেব আলী ওরফে রানাকে গ্রেপ্তার করে রাতেই গোপালগঞ্জ সদর থানায় আনা হয়।
ওসি জানান, রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট মো. মামুনুর রশীদের আদালতে তাকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর হবে কিনা তা আদালত নির্ধারণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার ভোজেরগাতী গ্রামে মায়ের হাত-পা বেঁধে রায়হান সরদার (১০) ও রইজ সরদার (৪) নামে দুই শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
নিহতদের বাবা ইউসুফ সরদার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার গহওরডাঙ্গা মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। চাকরির সুবাদে তিনি প্রায় সময় বাইরে থাকতেন। তবে ঘটনার সময় নিহতদের মা কুলসুম বেগম ঘরেই ছিলেন। দুই ব্যক্তি তার হাত-মুখ বেঁধে শিশুদের হত্যা করে বলে প্রথমে তিনি জানালেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হতে থাকে। কথিত প্রেমিকের কথায় নিজেই দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন কুলসুম বেগম।
শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম কুমার ঘোষের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
আদালতকে কুলসুম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে বড় ছেলে রায়হান সরদারকে (১০) হাত-পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন। পরে ছোট ছেলে রইজ সরদারকে (৪) বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন তিনি।
এলাকাবাসী জানান, কুলসুমের স্বামী ইউসুফ সরদার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার গহওরডাঙ্গা মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। চাকরি সুবাদে বেশিরভাগ সময়ই তিনি এলাকার বাইরে থাকেন। এ সুযোগে রানা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন কুলসুম।
গোপালগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আমিরুল ইসলাম জানান, কুলসুমের বাবা মাওলানা বেলাল মাদারীপুরের একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। গত বছর তিনি মারা যাওয়ার পর তার মোবাইল সিমটি কুলসুম ব্যবহার করতেন। গত ১৭ নভেম্বর রানা এক ব্যক্তি তার মোবাইলে ফোন করেন। পরবর্তীতেও তিনি কয়েক দফা ফোন করেন। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে কুলসুম বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তবে কুলসুমের দুই সন্তান তাদের ভালোবাসার পরিণতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রানার কথামতো প্রেমের সফল পরিণতির জন্য দুই সন্তানকে হত্যা করেন বলেও আদালতে স্বীকার করেন কুলসুম। গত বৃহস্পতিবার রাতে একাধিক বার রানার সঙ্গে কুলসুমের কথা হয়। সর্বশেষ রাত ৮টা ১০ মিনিটে তাদের মধ্যে কথা হয় বলেও জানান এএসপি।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৯:০৫ পিএম,০৬ ডিসেম্বর ২০১৫, রোববার
এমআরআর