পরকীয়ার জের : স্বামীর লাশের উপর তিনমাস গোসল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট :

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় নিজ বাড়ির গোসলখানার মাটির নিচে চাপা দেওয়া এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে (৪৩)।

নিহত আল-আমীন শেখ (৫৫) মোরেলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কুমারিয়াজোলা গ্রামের বাসিন্দা। তিন মাস ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চার সন্তানের জননী আল-আমিনের স্ত্রী ফাতেমা পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

নিহতের ভগ্নিপতির অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ কুমারিয়াজোলা গ্রামে আল-আমিন শেখের বাড়ি থেকে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক প্রতিবেশী শাহাজান শেখকে (৫০) আসামি করে ভগ্নিপতি মো. মোবারক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মোরেলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পেশায় রিকশাচালক আল-আমিন শেখ জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় থাকতেন। ১৬ মার্চ রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন।

এ বিষয়ে নিহতের ছেলে মোহাম্মদ আলী বাবা নিখোঁজের খবর জানিয়ে ঢাকার কেরানিগঞ্জ থানায় ২রা এপ্রিল একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

নিখোঁজ আল-আমীনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে জানা যায়, সবশেষ ১৬ মার্চ তিনি মোরেলগঞ্জের ফুলহাতা টাওয়ারের অন্তর্গত কোন এলাকা থেকে কথা বলেছেন। সেই সূত্র ধরে আল-আমীনের ভগ্নিপতি মোবারক দু’দিন আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে যান। তখন আল-আমীন বাড়ি এসেছিলো কি না, জানতে চাইলে তার স্ত্রী ফাতেমা উল্টা-পাল্টা উত্তর দিতে থাকেন।

তার কথাবার্তায় মোবারকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তিনি মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে গিয়ে আল-আমীনের স্ত্রী ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ওসি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে ফাতেমা হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির রান্না ঘরের পাশের ইট বিছানো গোসলখানার মাটি খুঁড়ে আল-আমীন শেখের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ফাতেমা বেগমের বরাত দিয়ে ওসি জানান, তার স্বামী আল-আমীন শেখ ১৬ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। ওই রাতেই ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে ধারালো দেশি (গুপ্তি) অস্ত্র দিয়ে তিনি তার স্বামীর বুকে আঘাত করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।

পরে প্রেমিক প্রতিবেশী শাহাজান শেখের (৫০) সহযোগিতায় মৃতদেহ গোসলখানায় মাটি চাপা দিয়ে রাখেন। এ হত্যার ঘটনা যাতে কারো নজরে না আসে সে জন্য ওই গোসলখানায়ই নিয়মিত গোসল করতেন ফাতেমা বেগম।

আটকের পর ফাতেমা বেগম স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আটক ফাতেমা বেগমকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট আদালতে এবং উদ্ধারকৃত মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আদালতে ফাতেমা স্বামীকে হত্যা ও মৃতদেহ গুম চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে পারেন বলে ওসি জানিয়েছেন।

আপডেট :  বাংলাদেশ সময়  ০২:৪৯   অপরাহ্ন,  ১৮ জুন ২০১৫,  বৃহস্পতিবার

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Share