প্রবাস

পবিত্র মক্কা-মদিনার ইমাম হতে যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন

সম্প্রতি মক্কা-মদিনায় নিয়োগ পেয়েছেন কয়েকজন নতুন ইমাম ও খতিব। মক্কা-মদিনার নবনিযুক্ত ইমাম ও খতিবদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে লিখেছেন মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা-

শায়খ ড. বানদার ইবনে আবদুল আজিজ

মসজিদুল হারামের নবনিযুক্ত খতিব। তিনি সুমধুর সুরে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। তাঁর পুরো নাম বানদার ইবনে আবদুল আজিজ ইবনে সিরাজ ইবনে আবদুল মালিক বালিলাহ। ১৩৯৫ হিজরির ৫ জুমাদাল উলা তিনি পবিত্র মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মক্কাতেই। ছোটবেলায় পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ১৪১৩ হিজরিতে মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৪১৭ হিজরিতে ইসলামী শরিয়ত ও গবেষণা অনুষদে শরিয়তের জ্ঞান-অভিজ্ঞান অর্জন করেন।

এরপর উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ইসলামী ফিকহে মাস্টার্স এবং ৩০ জুমাদাল উলা ১৪২৯ হিজরিতে ফিকহে ইসলামীর ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শুরু হয় ১৪৩১ হিজরিতে মসজিদুল হারাম একাডেমিতে ফিকহের সহযোগী শিক্ষক হিসেবে। একই বছর তায়েফ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

পবিত্র রমজানে বাহরাইন, কুয়েত, কাতার ও সুইজারল্যান্ডে তারাবির ইমামতি করেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মক্কার বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর ১৪৩৩ হিজরিতে সৌদির ধর্মমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারি ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৪৩৪ হিজরিতে পবিত্র কাবার মসজিদুল হারামে তারাবির ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই বছরের জিলহজের ৪ তারিখে মসজিদুল হারামের স্থায়ী ইমাম হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

শায়খ আবদুল্লাহ বিন আওয়াদ আল জুহানি

মসজিদুল হারামের নবনিযুক্ত খতিব। পুরো নাম আবদুল্লাহ ইবনে আওয়াদ বিন ফাহাদ বিন মায়ুফ বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন কিদওয়ান আল-হিমি আল-ধবানি জুহানি। ১৯৭৬ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি মদিনার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

সুমধুর সুরে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য তিনি বিশ্ববিখ্যাত। তাঁর মধুর কণ্ঠে মুসল্লিদের হৃদয় বিগলিত হয়। মসজিদুল হারামে ইমামতির আগেও মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদ-ই-নববী ও মসজিদে কুবার মতো প্রসিদ্ধ মসজিদে ইমামতি করেন।

ইয়াসির আদ-দাউসারি

মসজিদুল হারামের নবনিযুক্ত ইমাম। পুরো নাম ইয়াসির ইবনে রাশেদ ইবনে হুসাইন আল-বিদআনি আদ-দাউসারি। তিনি সৌদি আরবের একজন বিখ্যাত কারি। তিনি ১৯৮০ সালে মক্কা থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল খারাজ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। সর্বশেষ সৌদি আরবের হায়ার জুডিশিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি সৌদি বিমানবাহিনীর কোরআন হেফজ প্রকল্প প্রিন্স সুলতান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হন। এ ছাড়া তিনি সৌদি সায়েন্টিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য নোবেল কোরআন অ্যান্ড ইটস সায়েন্সসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের সদস্য।

শায়খ ড. আহমদ বিন তালেব হামিদ

মসজিদ-ই-নববীর নবনিযুক্ত খতিব। ১৯৮০ সালে তিনি রিয়াদের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই সুরেলা তিলাওয়াতের জন্য সবার প্রিয় ছিলেন এই বিখ্যাত কারি। শিক্ষাজীবনের হাতিখড়ি তাঁর দাদা মসজিদ-ই-নববীর সাবেক ইমাম শায়খ আবদুল মজিদ বিন হাসান জাবর্তি (রহ.)-এর কাছে। অনার্স করেন মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তী সময়ে তিনি সৌদি আরবের হায়ার জুডিশিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স করেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই পিএইচডি করছেন।

২০১৩ সালের পবিত্র রমজান মাস থেকে তিনি মসজিদ-ই-নববীর তারাবি ও তাহাজ্জুদের ইমাম হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এর পর থেকে তিনি মসজিদ-ই-নববীর বিভিন্ন ওয়াক্তের ইমামতি করে আসছিলেন।

ড. আহমদ বিন আলী আল-হুজাইফি

মসজিদ-ই-নববীর নবনিযুক্ত ইমাম। এর আগে তিনি মসজিদে কুবার ইমাম ছিলেন। হৃদয়কাড়া কোরআন তিলাওয়াতের জন্য তিনি বেশ বিখ্যাত। তিনি মসজিদ-ই-নববীর খতিব আলী বিন আবদুর রহমান আল হুজাইফির পুত্র। তিনি মদিনার তাইবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। এর আগে তিনি মদিনার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং সেখান থেকে মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. খালেদ বিন সুলাইমান আল মুহান্না

মসজিদ-ই-নববীর নবনিযুক্ত ইমাম। তিনি ১৩৯৬ হিজরিতে আল আহসায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সেখানকার বিচারপতি ছিলেন। সেখান থেকে ১৩৯৯ হিজরিতে তাঁরা রিয়াদে চলে আসেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মাদরাসায়ে জাবালে নূর থেকে। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন রিয়াদ সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউট থেকে। তারপর মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৪১৮ হিজরিতে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বার্তা কক্ষ, ২০ অক্টোবর ২০১৯

Share