বাংলাদেশি বংশদ্ভূত চট্টগ্রামের লোহাগড়ার কৃতি সন্তান মুখতার আলম সৌদি সরকারের ঘোষিত প্রতিভাবান ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাক্তিদের নাগরিকত্ব প্রদান কর্মসূচীর প্রথম কাতারে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সৌদি নাগরিকত্ব পেলেন। নাগরিকত্ব প্রদানের পর তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন ড. শায়ক আব্দুর রহমান সুদাইস।
গত ১৪ নভেম্বর রোববার মক্কা-মদিনা অধিদপ্তরের প্রেসিডেন্ট ও মক্কার গ্রান্ড ইমাম প্রফেসর ড. শায়খ আবদুর রহমান সুদাইস অধ্যাপক মুখতারের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়ার পর বক্তব্যে শায়খ মুখতারের নেতৃত্বে একটি স্বতন্ত্র আরবি ক্যালিগ্রাফি একাডেমি এবং কাবার গিলাফের ক্যালিগ্রাফি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য প্রপোজল তৈরির আদেশ দিয়েছেন।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’-এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশার দক্ষ বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার এ রাজকীয় আদেশ জারি করা হয়।
নাগরিকত্ব পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আরও আছেন, ইতিহাসবিদ ড. আমিন সিদো, ড. আবদুল করিম আল সামমাক, প্রখ্যাত গবেষক ড. মুহাম্মদ আল বাকাই ও প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী সামান আল আনি।
সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে আরোও বলা হয়, মুকতার আলম বর্তমানে সৌদি আরবের মক্কার কিসওয়াহ কারখানায় প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং ফোরামে তাঁর প্রধান ক্যালিগ্রাফিগুলো প্রদর্শিত হয়েছে। ক্যালিগ্রাফি দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পাঠদান করেন। মক্কার দ্য ইনস্টিটিউট অব হলি মস্ক তথা পবিত্র মসজিদুল হারাম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক তাঁর পাঠ শেখানো হচ্ছে।
মুকতার আলম মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সার্টিফিকেটের ক্যালিগ্রাফার হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও প্রশংসার সনদ পেয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, মুকতার আলম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের রশীদের ঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মুফিজুর রহমান বিন ইসমাঈল শিকদার। মা শিরিন বেগম। মুকতারেরা চার ভাই ও এক বোন। তার বাবা চুনতি হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি দীর্ঘ সময় সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফার্মাসিস্ট হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত বাবার কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যেরা দীর্ঘ সময় সৌদিতে কাটিয়েছেন। বর্তমানে মুকতার তাঁর পরিবারের মা, স্ত্রী ও চার মেয়েকে নিয়ে পবিত্র নগরী মক্কায় বসবাস করছেন ।
এর আগে প্রতিভাবান ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন বিদেশি পেশাজীবীদের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাজকীয় এক ফরমানে এ তথ্য জানানো হয়।
এ সম্পর্কিত একটি আইনেরও অনুমোদন দিয়েছে দেশটি। আইনে বলা হয়েছে, কয়েকটি পেশায় বিশেষ ভাবে দক্ষদের সৌদির নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
এ সংক্রান্ত রাজকীয় আদেশে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী এবং আইন, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও প্রযুক্তিবিদ্যায় চৌকস ও দক্ষ পেশাজীবীরা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সৌদির নাগরিকত্ব পাবেন।
সৌদি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা বা ‘ভিশন-২০৩০’ বাস্তবায়নে বিভিন্ন পেশায় দক্ষ ও চৌকসদের আকৃষ্ট করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। নাগরিকত্ব লাভকারী দক্ষ পেশাজীবীরা সৌদি আরবের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে অবদান রাখবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সারা দুনিয়ার মুসলিমদের কিবলা হচ্ছে মক্কা নগরীতে অবস্থিত পবিত্র কাবাঘর। এই মহিমান্বিত ঘরকে কয়েকটি চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। প্রতিবছর ৯ জিলহজ হজের দিন হাজিরা যখন আরাফাতের ময়দানে থাকেন, তখন মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও কম থাকে । ঐ সময় কাবার গায়ে কালো চাদর বা গিলাফ জড়িয়ে দেয়া হয়। নতুন “গিলাফ” পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদক: সাগর চৌধুরী