পদ্মা সেতু দিয়ে ২ ঘণ্টায় শরীয়তপুর থেকে ঢাকা

আগামী ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে, স্বপ্নের এই সেতুকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ঈদের খুশি। তাদের একটাই কথা, কবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সরাসরি ঢাকায় যাব। সময় যেন আর কাটছে না। এ অঞ্চলের পরিবহন ব্যবসায়ীরা নতুন উদ্দীপনা নিয়ে ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে নামাচ্ছেন তিন শতাধিক বাস।

পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরায়। তাই উৎসাহ উদ্দীপনা দেশের অন্য জেলার মানুষের থেকে এখানকার মানুষের একটু বেশিই। তবে ঢাকার খুব কাছে হলেও প্রায় দেড় যুগ ধরে সরাসরি বাস যোগাযোগ ছিল না এ জেলার। এবার পদ্মা সেতুর বদৌলতে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। আর শুধু পরিবহন ব্যবসায়ীরাই নন, বাস নামাচ্ছেন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, প্রবাসী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ অনেকেই। এখানকার পরিবহন ব্যবসায়ীরা উন্নতমানের তিন শতাধিক নতুন এসি-ননএসি বাস চালু করতে যাচ্ছেন। এজন্য তারা প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর দিনই এসব বাসের একটি অংশ শরীয়তপুর-ঢাকা ও শরীয়তপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল শুরু করবে।

এরই মধ্যে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছে শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। তারা ৫০টি নতুন এসি এবং নন-এসি বাস তৈরি করছেন। এছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস ৪০টি, শরীয়তপুর ট্রান্সপোর্ট ৩০টি ও গ্লোরী পরিবহন ২০টি গাড়ি তৈরি করছে।

এরই মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাস ঢাকা থেকে মাওয়ার শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর একেকটি বাস তৈরিতে খরচ পড়ছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। এসব পরিবহন ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মিরপুর, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর পর্যন্ত চলতে চায়।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও পরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর ধরে ঢাকা-শরীয়তপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ। শরীয়তপুরের বেশির ভাগ মানুষই বাসে প্রথমে মাঝিরঘাট, সেখান থেকে লঞ্চ বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারে পার হন। এরপর মাওয়া থেকে বাসে ঢাকায় পৌঁছান। পদ্মা সেতু চালু হবে- এ ঘোষণার পর সরাসরি বাস চালুর জন্য শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ, গ্লোরী পরিবহন লি., শরীয়তপুর ট্রান্সপোর্ট ও পদ্মা ট্রাভেলসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি উদ্যোগ নিয়েছে। তারা আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এসি-ননএসি বাস তৈরি করছে। ভলভো, আইসার, অশোক লেল্যান্ড, টাটা গাড়ির (বাস) চেসিস কেনা হয়েছে। শরীয়তপুর ছাড়াও ঢাকার সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে চলছে বডি তৈরির কাজ।

শরীয়তপুর শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এখন আর কষ্ট হবে না, পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। এক গাড়িতেই চলে আসতে পারব মালামাল নিয়ে।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ২৫ জুন অর্থাৎ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনই আমরা বাস সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাদের রুট পারমিট আছে, তারাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। আর শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরী পরিবহন রুট পারমিট নিয়ে নতুন বাস তৈরি করছে। অন্য কেউ ব্যবসা করতে চাইলে বিআরটিএর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে রুট পারমিট নিতে হবে।

পদ্মা ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনেই আমরা বাস সার্ভিস চালু করতে চাই। পরীক্ষামূলকভাবে আমরা ১২টি বাস ঢাকা থেকে-মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চালাচ্ছি। পাশাপাশি এ সেতু চালু হলে শরীয়তপুর জেলার শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় বিকাশ ঘটবে। সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

বিআরটিএ শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক মাহবুব কামাল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস চালু হবে। তখন আর আমরা অনুমোদন দেব না। আমাদের প্রধান কার্যালয় ঢাকা থেকে অনুমোদন দেওয়া হবে। এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। আমরা চাই সবাই নিয়ম মেনে ব্যবসা করুক।

বার্তা কক্ষ, ৪ জুন ২০২২

Share