সারাদেশসহ চাঁদপুরে মার্চ-এপ্রিল দু’মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ ১ মে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে শুরু করবে চাঁদপুরের জেলেরা। ৩০ এপ্রিল মধ্য রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ছিলো। চাঁদপুর নৌ-সীমানায় নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ৩০ এপ্রিল । দীর্ঘ দু’মাস অলস সময় কাটানোর পর শুক্রবার থেকে নদীতে মাছ ধরতে নদীতে নামছে ৫১ হাজার জেলে।
এ কারণে স্বস্তি ফিরে আসছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি জাটকা রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে দেশের খ্যাতনামা ইলিশ গবেষক ড.আনিছূর রহমান ২৯ এপ্রিল বুধবার তাঁর দপ্তরে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে জানান্ । কেননা বর্তমানে ইলিশের অভয়াশ্যমের পরিধি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ জাটকা সংরক্ষণের জন্যে সরকার দু’মাস চাঁদপুরসহ দেশের আরো কয়েক স্থানে অভয়াশ্রম কেন্দ্র ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে যে কোনো ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিলো। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রস্তুত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘এবার পানির গুণাগুণ ও খাদ্যের উপাদান অনেকটাই ভালো রয়েছে। করোনার কারণে জাটকা রক্ষা কর্মসুচি কিছুটা সীমাবদ্ধতায় রয়েছিল। তবুও উৎপাদন ব্যাহত হবে না । দেশে গেলো অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৩৩ হাজার মে.টন। যেখানে ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার মে.টন । চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার মে.টনে হওয়ার কথা রয়েছে । আগামি ৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন বাড়বেই । ’
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার ইলিশ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা নয় । কেননা জেলেদের পূর্নবাসনে সরকার কর্তৃক কর্মসূচি ভালোভাবেই চলছে। তবে কতিপয় অসাধূ জেলে কর্তৃক কোনো কোনো স্থানে জাটকা কিছুটা নিধন হলেও দেশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না ।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দু’ মাস নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১ শ’ কি.মি এবং পদ্মার ২০ কি.মি. এলাকায় সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় । যার ৬০ কি.মি.পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর,হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৫১ হাজার ১ শ’র মত জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নদীতে মাছ ধরতে পারবে । চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা,বহরিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামত করে ১ মে মধ্য রাত থেকে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫১ হাজার মে. টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মে.টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৭ হাজার মে. টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯৫ হাজার মে. টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ লাখ ৯৬ হাজার মে. টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৭ হাজার মে. টন এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি।
প্রতিবেদক আবদুল গনি , ১ মে ২০২০