চাঁদপুর সদর

পদ্মা-মেঘনার তীব্র স্রোত ঝুঁকির মুখে চাঁদপুর শহরের রক্ষা বাঁধ

দেশের উত্তরের বন্যার পানির তীব্র স্রোত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা দিয়ে নামছে দক্ষিণের সাগরে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে শহররক্ষা ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। একই সঙ্গে পানির উচ্চতাও বেড়ে চলেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।

কোনো কোনো স্থানে বাঁধের আশপাশের নদীতীরে ফাঁটল ধরেছে। দেবে গেছে সিসি ব্লক। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত কয়েকদিন ধরে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় এখন তীব্র স্রোত বইছে। দক্ষিণের সাগরে নামতে থাকা পানির স্রোতের গতি বেশি হওয়ায় তা তীরে আছড়ে পড়ছে। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে শহরের পুরানবাজার হরিসভা এলাকা, সদরের তরপুরচণ্ডি ইউনিয়নের আনন্দবাজার, হরিণা ফেরিঘাট, হাইমচরের জনতাবাজার, আমতলী ও এর আশপাশের এলাকা।

পানির স্রোতের কারণে ইতিমধ্যে এসব এলাকার নদীপাড় ভেঙে গেছে। দেবে গেছে নদীতীর সংরক্ষণের সিসি ব্লক। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। কারণ, অতীতে এমন স্রোতের কাছে পৈতৃক ভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকেই। ফলে নতুন করে তাদের মধ্যে আবারো ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জেলার হাইমচরের চরভৈরবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মাস্টার বলেন, ‘এই মুহূর্তে নদীতীর রক্ষা করা না গেলে বাড়িঘর, ফসলি জমি, বাগান ও বাজার ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে।’

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী বলেন,’বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে এসব এলাকা রক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন তা হুমকির মুখে।’ তাই অতীতে নদীপাড়ের জনপদ রক্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা.দীপু মনির উদ্যোগে সরকার যেভাবে এগিয়ে এসেছে এবারো সে পরিস্থিতি মোকাবেলার দাবি জানান এ জনপ্রতিনিধি।

অন্যদিকে, নদীতীর সংরক্ষণ এবং বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর) মো. আবু রায়হান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় সিসি ব্লক ও বালিভর্তি বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে এসব আপতকালীন ব্যবস্থা হলেও বরাদ্দ সাপেক্ষে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা হবে।

চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন থেকে দক্ষিণের হাইমচর পর্যন্ত নদীপাড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকা রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। এ সরকারের প্রথম মেয়াদে চাঁদপুর শহর ও চাঁদপুর সেচপ্রকল্প রক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

এদিকে, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন হুমকির মুখে রয়েছে একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সফিউলাহ সরকার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কের মাঝে রয়েছি।’ রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, ‘এলাকার নদীভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

বার্তা কক্ষ

Share