জাতীয়

পদ্মাসেতু উদ্ধোধনে প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন : দু’পাড়ে সাজ সাজ রব

তাই পদ্মার দুপাড়ে এখন উচ্ছ্বাসের জোয়ার, সাজ সাজ রব। একদিকে প্রকল্প এলাকায় চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেওয়ার ব্যস্ততা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবরে এ এলাকার মানুষের মনে বইছে আনন্দের হাওয়া। তাদের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার সকালে জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু এবং নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর বিকেলে লৌহজংয়ের খানবাড়ি মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি।প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পদ্মাসেতুর বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে বলে আশাবাদী সেতুমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর এ আগমনকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড ব্যস্ততা দেখা গেছে সেতু প্রকল্প এলাকায়। সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা দেখতে সেখানে যান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রকল্প এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ। দুই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য ২ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব, সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য রয়েছে। সব ভেন্যুতেই থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুন্সীগঞ্জে আগমন উপলক্ষে জেলার লৌহজংয়ে সাজ সাজ রব উঠেছে। মাওয়া থেকে দোগাছি পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। খানবাড়ি এলাকায় ৭ একর জায়গা জুড়ে জনসভা হবে। ঢাকা-মাওয়া সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে ছোট-বড় ব্যানার ও ফেস্টুন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর কাজ করে যাচ্ছে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহম্মদ খলিকুজ্জামান বলেন, ‘১২ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য এখানে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে এএসপি (সার্কেল) সামুসজ্জামান বাবু বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মূল কাজ উদ্বোধন উপলক্ষে আসবেন। তাই নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এখানে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুরো এলাকায় ফোর্স নিয়োগ করেছি। কয়েকটি ভেন্যু আছে। সব জায়গায় ১৫/২০ দিন আগে থেকেই ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’

তিনি আরো বলেন, ‘১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুন্সীগঞ্জে আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি এবং নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে জেলার পুলিশ প্রশাসন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর ১২টায় লৌহজংয়ের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল সেতুর এবং নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করবেন। আধা ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী দোগাছি সার্ভিস এরিয়া-১ এ নামাজ আদায় ও মধাহ্নভোজ করবেন। পরে দুপুর আড়াইটায় মাওয়া চৌরাস্তা গোল চত্বর সংলগ্ন মেদেনীমন্ডল খানবাড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন। ভাষণ শেষে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।’

পদ্মার মাওয়া পাড় থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরত্বে নদীর মধ্যে অবস্থিত ৭ নম্বর ব্লক। যেটিকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে মূল পাইলিংয়ের জন্য। ইতোমধ্যে নদীতে নিয়ে আসা হয়েছে ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পাইল। নদীর পাড়ে জড়ো করা হয়েছে অন্য পাইলগুলোও।

৭ নম্বর সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। আর পদ্মা সেতু যেহেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে আসছে। তাই হয়তো এই ৭ নম্বর ব্লককে নির্ধারণ করা হয়েছে আনুষ্ঠানিক মূল পাইলিংয়ের জন্য। আর এ রকম ৬টি পাইলের ওপর নির্মাণ করা হবে এক একটি পিলার। যেটি করতে সময় দরকার হবে ১ মাসেরও বেশি। আর পর্যায়ক্রমে এ রকম আরো ৪১টি পিলারের ওপর নির্মাণ করা হবে ৬ দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু।

এর আগে মার্চ মাসে টেস্ট আর আগস্ট মাসে ট্রায়াল পাইল থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মূল পাইলের নকশা। এক একটি পাইলকে নদীর তলদেশে পাঠানো হবে অত্যাধুনিক সব হ্যামার আর ক্রেন দিয়ে। এ জন্য ব্যবহার করা হবে চারটি আধুনিক ফ্লোটিং ক্রেন। এ ছাড়াও প্রায় ১০০টি ছোট-বড় ক্রেন এবং বিশ্বের সবচে শক্তিশালী ২টি হাইড্রোলিক হ্যামারও প্রস্তুত। পদ্মার দু`পাড়ের মানুষগুলোর মতোই অপেক্ষার পালা শেষ সংশ্লিষ্টদেরও।

পদ্মা সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, গত বুধবার থেকেই পাইলিং কাজের সরঞ্জামাদি প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে ছয়টি সাপোর্ট পাইল স্থাপন করে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করা হবে। তারপর পাইল ড্রাইভিংয়ের জন্য পিলারের কাছে ড্রাইভ ক্রেন স্থাপন করা হবে। শেষে পাইল বসিয়ে বিশাল সাইজের হ্যামার দিয়ে ড্রাইভ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে এটি শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সেতু। এ ছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পাড়ে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরো ২৪টি পিলার থাকবে। সেতুর ৪২টি পিলারে মোট ২৪০টি এবং দুপাড়ের ১২টিতে ২৪টি পাইল বসানো হবে। সর্বমোট ২৬৪টি পাইল হবে। পাইলিংয়ের যন্ত্রপাতি সাজানোর কাজ চলছে। পাইল ড্রাইভিংয়ের পরই পদ্মা সেতুর ওপরের অংশের কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া নদীর দুপাড়ে কয়েক লাখ ব্লক তৈরি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নদীশাসনের কাজের জন্য। নদীশাসনের কাজও এগিয়ে চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মোট পাঁচটি প্রধান ভাগে হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজ। এখন পর্যন্ত মূল সেতু নির্মাণের ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং নদীশাসনের ১৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া সংযোগ সড়কের মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরায় ৫৯ শতাংশ এবং মাওয়ায় ৬৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট কাজের ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত গতিতে সেতুর কাজ চলছে। যেভাবে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময় ২০১৮ সালের শেষেই এর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’

 নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৮:১৫ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫, শুক্রবার

ডিএইচ

Share