জাতীয়

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ও সচিব ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বিগত এপ্রিল মাসে ৩ দফা বৈঠক করেন।

বুধবার (৭ জুন) প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়ালের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, এসব বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, চাহিদা নির্ণয়, স্থানীয় উৎপাদন, মজুদ পরিস্থিতি, আমদানির পরিমাণ ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, টিসিবি এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ অবস্থা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে পণ্যভিত্তিক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

তিনি বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়ের লক্ষ্যে টিসিবির মাধ্যমে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করে চিনি, ছোলা, সয়াবিন তেল ও খেজুর সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। চলতি বছর ১৫ মে থেকে সারা দেশে ১৮৫টি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন এবং জেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এ টিমগুলো ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রয়োজনে জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তি আরোপ করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে বাজার পরিদর্শনমূলক অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সারা দেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা চলমান রয়েছে। এ সকল মোবাইল কোর্ট অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতারোধে জরিমানা আরোপ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জননিরাপত্তা নিশ্চিত সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে সড়ক, নৌ ও রেলপথ যানযাজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বাস-লঞ্চ-ট্রেনে অধিক যাত্রী বেড়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের চলাচল নির্বিঘ্নে করতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মহাসড়ক পথে যাতায়াত নিরাপদ করার লক্ষ্যে ২৯ দফা নির্দেশনা সংবলিত পত্র জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কসমূহ যানজটমুক্ত রাখা, বাস টার্মিনালের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা, সিএনজি স্টেশন সার্বক্ষণিক চালু রাখা, ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধ রাখা, বিআরটিসির স্পেশাল ঈদ সার্ভিস, ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি, ঈদ উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন দিনে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ দেওয়া ও খোলা, বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, অনভিজ্ঞ গাড়ি চালক দ্বারা মহাসড়কে মোটরযান না চালানো এবং কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন।

তিনি বলেন, এ সময় ভ্রমণ নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, মহাসড়কে যানজট মুক্ত রাখার জন্য অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন, বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশিসহ জনবহুল এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, স্থানীয় দুষ্কৃতিকারী বা ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও, যানজট নিরসনকল্পে বিভিন্ন সময় সভা, সেমিনার ইত্যাদিসহ মাইকিং করার মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে জনগণের নিরাপত্তার জন্য বাজার, শপিং মল, বিপণি বিতান, মার্কেট, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনালে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি, নাশকাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিবারাত্রি পুলিশি টহল এবং নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সড়ক পথের যে সকল স্থানে যানজট সৃষ্টি হতে পারে এবং যে সকল স্থান যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী সে সকল স্থান মেরামত করার জন্য ইতোমধ্যে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ৩৬ পিএম, ৭ জুন ২০১৭, বুধবার
এইউ

Share