জাতীয়

নয় কোটি স্মার্টকার্ড বিতরণ ব্যয় ৮৪ কোটি টাকা

প্রযুক্তিনির্ভর জাতীয় পরিচয়পত্র ‘স্মার্টকার্ড’ বিতরণের জন্য প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩রা অক্টোবর থেকে ৪ ধাপে দেশের ৯ কোটি ভোটারের হাতে তুলে দেয়া হবে উন্নতমানের এই কার্ড।

এর জন্য সময় লাগবে সর্বমোট ৪০০ দিন। আর বিতরণ কার্যক্রমে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় বিতরণ কার্যক্রম চলবে।

তৃতীয় পর্যায়ে ৬৪ জেলার সদর উপজেলাগুলোতে বিতরণ করা হবে। আর শেষ ধাপে বিতরণ করা হবে বাকি থাকা সব উপজেলাতে। ইসি সূত্র বলছে, সারা দেশে দৈনিক ২ লাখ ২৫ হাজার স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।

এতে ৭৫টি টিম কাজ করবে। প্রতি টিমে ২০ জন করে সর্বমোট ১৫০০ জন অপারেটর থাকবে। টিমপ্রতি থাকবে একজন করে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, যারা ডাটা ব্যাকআপসহ যে কোনো কারিগরি সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবেন।

সূত্র জানায়, স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য সারা দেশে সর্বমোট ৫২৫০টি বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে ৩৮৬টি সিটি ওয়ার্ড, ৩২০টি পৌরসভা ও ৪৫২৭টি ইউনিয়ন। সবমিলিয়ে সময় লাগবে ৪০০ দিন।

ইসি সূত্র বলছে, নিরাপত্তা ও জনগণের ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিকেন্দ্রে ২ জন ও প্রতি উপজেলায় ২ জন করে আনসার সদস্য নিয়োগ করা হবে। প্রত্যেক উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা স্ব স্ব উপজেলা/থানায় বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

আর সার্বিক তদারকির দায়িত্বে থাকবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাগণ।

ইসি সূত্র জানায়, স্মার্টকার্ড বিতরণে কার্যক্রমে প্রাথমিক পরিকল্পনায় ৮৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার ২০৭ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে অপারেটরদের সম্মানী বাবদ ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।

প্রতি স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য অপারেটরদের দেয়া হবে ৫ টাকা করে। একজন অপারেটর দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০টি কার্ড বিতরণ করতে পারবেন।

প্রতি টিম ম্যানেজার/টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের দৈনিক এক হাজার টাকা হারে সর্বমোট ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

পাশাপাশি টিম সহকারীদের দৈনিক ৫০০ টাকা হারে ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। উপজেলা/থানা পর্যায়ে কো-অর্ডিনেশন ব্যয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, সার্ভার স্টেশনের আনসারে নিয়োগের নিরাপত্তা ব্যয় ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা, বিতরণ কেন্দ্র নিরাপত্তা ব্যয় ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৬ টাকা, ফিট আউট ব্যয় সাড়ে ৫২ লাখ টাকা, বিতরণ টিমের যানবাহনের ব্যয় ১০ কোটি টাকা, জেলা পর্যায়ে কো-অর্ডিনেশন ব্যয় ৩২ লাখ টাকা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কো-অর্ডিনেশন ব্যয় ১০ লাখ টাকা। এছাড়া জ্বালানি ও অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮১১ টাকা।

বিতরণকারীদের প্রশিক্ষণ ব্যয় ৫০ লাখ টাকা, কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয় ব্যয় ৫ লাখ টাকা ও অপ্রত্যাশিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এদিকে প্রচার কার্যক্রমের ব্যয় প্রথমে ১০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে সেটা ১ কোটিতে নেমে আসে। তবে অন্য কয়েকটি খাতে ব্যয়ের আকার আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভুয়া পরিচয়পত্র প্রতিরোধে নাগরিকদের ইউনিক নম্বর সংবলিত উন্নতমানের ‘স্মার্টকার্ড’ দেয়ার উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সি একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই স্মার্টকার্ডে থাকছে ২৫টির মতো সেবা।

তার মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে চাকরির জন্য আবেদন, ভোটার শনাক্তকরণ, ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্ট তৈরি, ই-গভর্নেন্স ও ই-পাসপোর্ট সেবা। এ ছাড়া স্মার্টকার্ডটি অনলাইনে ও অফলাইনে দুই ভাবেই ভেরিফিকেশন করা যাবে। এতে নাগরিকের সব তথ্য সংবলিত মাইক্রোচিপস থাকবে।

স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় নাগরিকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেয়া হবে। পাশাপাশি জমা দিতে পূর্বের লেমোনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র। যারা এখনো পরিচয়পত্র পাননি, তাদেরকে হালনাগাদের ফরমটা জমা দিতে হবে। (মানবজমিন)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৩:৩০ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share