সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার টাকাসহ চারদফা দাবি মেনে নেওয়ায় পঞ্চম দিনে এসে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন নৌযান শ্রমিকরা।
শনিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর দৈনিক বাংলার শ্রম ভবনে নৌযান মালিক, শ্রমিক নেতা ও সরকারপক্ষের দীর্ঘ সাড়ে ৭ ঘণ্টার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নৌযান মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ চার দফা দাবি মেনে নেন।
শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা ৪২ মিনিটের দীর্ঘ বৈঠকে এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের নৌযান শ্রমিক ও মালিকরা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সরকারের কাছে। এক পর্যায়ে ঈদ সামনে রেখে নৌযান মালিকরা নৌযান শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ চারদফা দাবি নেয়।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে ‘ক’ ক্যাটাগরিতে নৌযান শ্রমিকদের বেতনভাতা সর্বনিম্ন নয় হাজার ছয়শত পঞ্চাশ টাকা ও ‘গ’ ক্যাটাগরিতে নৌযান শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতনভাতা সাত হাজার সাতশত পঞ্চাশ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে ‘খ’ ক্যাটাগরিতে কোনো বেতন-ভাতা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহরের ঘোষণা দেন।
শ্রমকিদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি স্থায়ী না অস্থায়ী এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া টিপু বাংলানিউজকে বলেন, তাদের সর্বনিম্ন বেতনভাতার দাবি ছিলো দশ হাজার টাকা। সেখানে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সিন্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের ‘ক’ ক্যাটাগরিতে নয় হাজার ছয়শত পঞ্চাশ টাকা ও ‘গ’ ক্যাটাগরিতে সর্বনিম্ন সাত হাজার সাতশত পঞ্চাশ টাকা নির্ধারণ করেন। তবে ঈদের পরে সরকার, মালিক ও শ্রমিকরা একত্রে বসে বিষয়টি স্থায়ীভাবে সুরাহা করা হবে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ৫ম দিনের মাথায় মালিকপক্ষ শ্রমকদের দাবি মেনে নেওয়ায় আমরা খুশি।
পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য সরকারের আন্তরিকতাকেও সাধুবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা সবসময় অবহেলিত ও নিপীড়িত। তারা কষ্ট করেই থাকে। কিন্তু তাদের কষ্টের কথা কেউ কখনও ভাবে না। এর আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার দাবিতে আরও দু’বার কঠোর আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এবার সরকারের আন্তরিকতার কারণে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় আমরা আনন্দিত।
শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। আর সেটি নৌযান মালিকরাও মেনে নিয়েছেন। তবে তাদের বেতনভাতার দাবিটি কার্যকর হবে ১ জুলাই ২০১৬ থেকে। ফলে গত মাসের বেতন-ভাতার সঙ্গে এ মাসের বাড়তি অর্থ যোগ হবে। তবে ‘খ’ ক্যাটাগরির বেতন-ভাতার বিষয়টি ঈদের পরে বসে নির্ধারণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে পারায় ভালো লাগছে। এছাড়া আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, শ্রম পরিদপ্তরের পরিচালক যুগ্ম সচিব এসএম আশরাফুজ্জামান, শ্রম সচিব, শ্রম উপ সচিব, যাত্রী কল্যাণ পরিবহন সমিতি ও মালিক সমিতির চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম, সংগঠনের নেতা কাজী করিম ও মো. বাদল, জাহাজ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, নৌ শ্রমিক সংগ্রাম ফেডারেশনের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম, নৌযান ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুর আলমসহ প্রমুখ।
বেতন-ভাতাসহ চারদফা দাবিতে ‘নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে গত সোমবার (২২ আগস্ট) দিনগত রাত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে নৌযান শ্রমিকরা এ ধর্মঘট শুরু করেন। (বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০০ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৬, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur