মতলবের কুখ্যাত নৌ-ডাকাত বাবলা নিজ বাহিনীর হাতে নিহত

চাঁদপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী মেঘনা নদীতে নিজ বাহিনীর হাতে নৌ-ডাকাত গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় কুখ্যাত নৌ-ডাকাত বাবলা বাহিনীর প্রধান বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসি নিহত হয়েছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের বাচ্চু খালাসী ছেলে নিহত বাবলা খালাসী। এ ঘটনায় আহত সহ আটক ১৩ জন।

মঙ্গলবার ( ২২ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মল্লিকের চর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে পার্শ্ববর্তী রহিম বাদশার বাড়িতে বালু মহলের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাবলা খালাসী ( ৩৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়। এদিকে কুখ্যাত নৌ-ডাকাত বাবলার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসীর উল্লাস এবং মিষ্টি বিতরণ করেছে।

জানা যায়, কুখ্যাত নৌ-ডাকাত বাবলা বাহিনীর প্রধান বাবলা বিরুদ্ধে মতলব উত্তর, দাউদকান্দি, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হত্যা, ডাকাতি ও নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন সহ বিভিন্ন ৪২টি মামলা রয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ইমামপুর ইউনিয়নের মল্লিকের চর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে দুটি স্পিডবোট এবং দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ২৫ থেকে ৩০ জন সহযোগী নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন ডাকাত সর্দার বাবলা। কিছুক্ষণ পর তারা নদী ছেড়ে নদী তীরবর্তী মল্লিকেরচর গ্রামে রহিম বাদশার বাড়িতে চলে আসেন। পরে রহিম বাদশার বাড়ি থেকে গোলাগুলি শব্দ শুনতে পান তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গোলাগুলির পর কিছু লোককে দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনার কিছু সময় পরে রহিম বাদশার বাড়িতে গিয়ে দেখেন দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বাবলার লাশ পড়ে আছে এবং পাশের অন্য একটি কক্ষে ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে আটকে রাখা হয়েছে। বাবলার মরদেহের পাশ থেকে বেশ কয়েকটি গুলির খোসা, নগদ ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রাম থেকে ৫ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীর ষোলআনী এলাকায় একটি বৈধ বালুমহাল থাকলেও নদীর মল্লিকের চর ও গুয়াগাছি এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধ দুটি বালুমহাল চলত। নৌ-ডাকাত বাবলার ছত্রছায়ায় মল্লিকের চরের বালুমহালটি পরিচালনা করতেন বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন মেম্বার ও রহিম বাদশা। অন্যদিকে নদীর গুয়াগাছিয়া এলাকার বালুমহালটি পরিচালনা করতেন আরেক নৌ-ডাকাত নয়ন বাহিনীর প্রধান নয়ন।

দুই বাহিনীর লোকজন আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিয়মিত নদীতে মহড়া দিতেন।

নিহত বাবলার স্ত্রী আফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর প্রতিপক্ষ ছিল নৌ-ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। আমাদের লোকজনের মাধ্যমে খবর নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, নৌ-ডাকাত নয়ন ও তার লোকজন স্পিডবোট নিয়ে এসে গোলাগুলি করেছে।’

‘বাবলাকে গুলি করে হত্যা করার পর তারা দ্রুত স্পিডবোট দিয়ে পালিয়ে যায়।’

বিষয়টি সম্পর্কে নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াস বলেন, ‘এই ঘটনার সাথে কিছু লোক আমাদের জড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনোভাবেই আমরা জড়িত নই।

‘ঘটনার সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। শুনেছি স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে।’

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমরা এ রকম একটি খবর পেয়েছি। খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, তবে বিষয়টি অন্তর্কোন্দল নাকি দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনা দিয়ে চলাচলকারী নৌযান চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম নৌ-ডাকাত বাবলা বাহিনী।

প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল তারা।

এদিকে কুখ্যাত নৌ- ডাকাত বাবলার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মুন্সীগঞ্জ সদর, গজারিয়া উপজেলার মেঘনা পাড়ের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান জানান কুখ্যাত নৌ- ডাকাত বাবলার গুলিবিদ্ধ লাশ নিশ্চিত করে আইনি ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ২২ অক্টোবর ২০২৪

Share