সারাদেশ

নৌকা বিক্রির হাট ও কারিগরদের সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

দেশজুড়ে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত বাহন হলেও নৌকা নির্মাণের জন্য কোন সুপরিকল্পিত সংগঠিত শিল্প কখনোই গড়ে ওঠেনি।

এর নির্মাতারা ছড়িয়ে আছে দেশের সর্বত্রই। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদেও, যাদের একেবারেই প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। নিজেদের সহজাত জ্ঞান থেকেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নৌকা বানাচ্ছেন এই মানুষেরা।

ছোট ছোট ডিঙ্গি বা কোষা নৌকা বানিয়ে গ্রামের হাটে বিক্রির পুরোনো চল আজও আছে। সে রকমই একটি বরিশালের এই হাটটি। কারিগররা এই নৌকাগুলো বানান নিজেদের বাড়িতে। নিয়ে আসেন হাটে। যার যেমন প্রয়োজন তেমনি মালিক বা মাঝিরা কিনে নিয়ে যায়। মূল্য বিচারে এগুলো হচ্ছে কম দামের নৌকা।

নৌকা বানানো ও বিক্রির চিত্র খানিকটা ভিন্ন গাজীপুরের এই গ্রামে। এখানে ত্রিশ বছর আগে কমপক্ষে ২৫ পরিবার নৌকা নির্মাণে যুক্ত ছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্যে জানা যায়। এই সংখ্যা কমেছে। এখানকার নির্মিত নৌকা বিক্রির জন্য বরিশালের মত কোনো হাট-বাজার বসে না। যাদের কেনা প্রয়োজন তারা বাড়িতে এসেই কিনে নিয়ে যান নৌকা।

দশ থেকে ত্রিশ চল্লিশ ফুট দীর্ঘ নৌকা নির্মাতারা নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় বানাতে পাড়লেও বৃহৎ অকৃতির নৌকা বানাতে দরকার হয় বিশাল খোলা মাঠ। বড় নৌকা বানাতেও যেমন সময় লাগে তেমনি বিপুল সংখ্যক কারিগরও যুক্ত করতে হয়। সেগুলো দামের দিক থেকেও থাকে বহুগুন বেশী।

ছোট হোক,বড় হোক প্রতিটি নৌকা বানানোর পেছনে কারিগরদের সুনিপুন দক্ষতা থাকতে হবে। সামান্য ভুলেও যে কোন নৌকার পরিবহনকে ঝুঁকিপূর্ন করে তুলতে পারে। যারা এসব নৌকা তৈরি করেন তাদের নৌকার নকাশা ও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানিক প্রকৌশল জ্ঞান তো দূরের কথা অনেকেরই সাধারণ আনুষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই।

সারাদেশে এধরনের কত নৌকা নির্মাতা আছে তার কোন সুনিদিষ্ট পরিসংখ্যানও নেই। তবে ধারাবাহিক ভাবে নদ-নদীর মৃত্যু ঘটতে ঘটতে দেড় দুইশতে নেমে আসা, ভরাটের কবলে পরে জলাশয়ের পরিমান কমে আসাসহ নানা কারণে নৌকার চাহিদা কমায় এর নির্মাতাদের কাজের জায়গা সংকোচিত হয়ে আসছে ক্রমশ।

দুই আড়াই দশক আগেও রাজধানীর জলাধারে নৌকার ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু জলাধার ভারাট হওয়ায় সড়ক যোগাযোগের ওপরই নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে পুরনো চর্চার মধ্যে গুলশাল ও মতিঝিলে এই নৌকা পারাপারই টিকে আছে এখনো। (বার্তাকক্ষ)

Share