চাঁদপুর

নৌকা-ধানের শীষে আমেজে ভোটার: শংকায় চাঁদপুরে বিএনপি-স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

শেষ পর্যন্ত চাঁদপুরের ৫ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে ৪ টিতে। মামলা জটিলতায় ও আর সমালোচনার মধ্য দিয়ে মতলব উত্তরের ছেংগারচর পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী বাতিল হওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রফিকুল আলম জর্জ বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাই ৫ পৌরসভার স্থলে মেয়র এবার নির্বাচন হবে ৪টিতে।

শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন রফিকুল আলম জর্জ নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাই শেষ দিকে এসে বাকী ৪ পৌরসভায় নৌকা-ধানের শীষ ও কয়েকটি স্বতন্ত্র প্রতীকেই মেয়র নির্বাচন হচ্ছে।

আসন্ন পৌর নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এবার নৌকা-ধানেরশীষ প্রতীক থাকায় ভোটারদারে মাঝে ভিন্ন এক আমেজ রয়েছে। তারা প্রার্থীর ইমেজের চেয়ে প্রতীকের ইমেজকেই প্রাধান্য দিতে চাইছেন।

প্রতীকের ইমেজকে প্রাধান্য দেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে একাধিক ভোটাররা জানান, প্রতীক এবার নৌকা আর ধানের শীষ, লড়াইও হবে নৌকা-ধানের শীষ। তাই অন্য কিছু চিন্তা করার সুযোগ নেই কারণ প্রতীকের সাথে জাতীয় ইস্যু জড়িত। এছাড়া আমরা জাতীয় প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি এবার সেটা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও মাঝেও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে প্রতীকের আনন্দে শংকার বিষয়টি কিছুটা কম থাকলেও বিএনপি ও স্বতন্ত্র্যের আড়ালে দু’দরের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঝে শংকা ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে শংকা রয়েছে। তাদের অনেকের অভিযোগ সরকার দলের প্রার্থীদের নেতাকর্মীরা তাদের নেতাকর্মীদেরকে সরাসরি প্রচারণায় বাধা না দিলেও এখন থেকেই নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না যেতে নানাভাবে হুমকি-দমকি দিচ্ছে। তবে এসব প্রার্থীরা অনেকটা আতংকের কারণে নির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে রিটার্নিং কমর্কতা কিংবা সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলছেন না। তাদের আশংকা নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে হয়রানি করা হতে পারে।

ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জ পৌরসভায়ও প্রচারণায় অংশ নেয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে কোনো প্রকার অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তবে নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন বাড়িতে থাকছে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবদুল মান্নান খান বাচ্চু।

হাজীগঞ্জ পৌরসভার আওয়াম লীগ প্রার্থী মাহবুব উল আলম লিপন চাঁদপুর টাইমসকে জানিয়েছেন, শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান হাজীগঞ্জে এসে শোডাউন করেছেন, এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় প্রায় ১৫ মিনিট বন্ধ রেখে সমাবেশ করে।’

এ বিষয়ে রিটার্র্নিং অফিসারকে জানানো হয়েছে কিনা জানালে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমাকে ওই সময় ওই সমাবেশে উপস্থিত প্রশাসনিক লোকেরা ফোনে জানিয়েছেন, তবে আমি সরকারদলের প্রার্থী, আমি বর্তমানে প্রচারণায় ব্যস্ত, তবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে রাজি নই।’

অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী আবদুল মান্নান খান বাচ্চু চাঁদপুর টাইমসকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন পরিবেশ ভালই ছিল, কিন্তু এইমাত্র (শনিবার সন্ধ্যায়) জানতে পারলাম আমার নির্বাচনী প্রচারণায় যেসব নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছে তাদের বাড়িতে পুলিশ কোনো প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই অভিযান চালাচ্ছে। এমন হলে নির্বাচন নিয়ে আমাদের শংকা তৈরী হবে। কোন নেতার বাড়িতে হানা দিয়েছে, কিছুক্ষণ পূর্বে কে আপনাকে ফোনে জানিয়েছে, তা জানতে চাইলে এ প্রার্থী জানান, বিএনপি নেতা আবদুল আওয়ালের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে, তবে সে বাড়িতে না থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

শংকার কথা উল্লেখ কারে বিএনপি প্রার্থী আবদুল মান্নান খান বাচ্চু চাঁদপুর টাইমসকে জানান, এভাবে পুলিশ হানা দিলে প্রচারণায় বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে মাঠে পাওয়া যাবে না। আমি বিষয়টি রিটার্নি কর্মকর্তাকে অবহিত করবো।’

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মঞ্জিলও চাঁদপুর টাইমসকে শংকার কথা প্রকাশ করে বলেন, আমার নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাতে গেলে হুমকি-দমকি দেয়া হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে না যেতে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে রির্টানিং অফিসারকে জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি, তবে তার কোনো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়নি বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছেংগারচর আওয়াম লীগ মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলম জর্জ নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিএনপির প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীন খোকন বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমার আইনজীবীরা জানিয়েছেন বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন এটি কীভাবে সম্ভব?

গণমাধ্যম নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে তাকে অবহিত করলে প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, ভোটার, সাংবাদিকসহ সকলেই জানে আমাকে কীভাবে বাদ দেয়া হয়েছে, আমি এখনো নিশ্চিত, বিষয়টি যেহেতু স্থগিত, সেহেতু মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে না এবং গেজেট প্রকাশ করা যাবে না।’

তবে বর্তমানে ওই এলাকার নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

অপরদিকে চাঁদপুরে ৫টি পৌরসভা নির্বাচনে ৭৯টির মধ্যে ৫৪টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ওইসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হবে বলে পুলিশ সুপার কার্যালয় জানিয়েছে।

জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, ছেংগারচর, মতলব, কচুয়া, হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় মোট ৪৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওইসব ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণের জন্য ৭৯টি কেন্দ্রে ৪শ ৭১টি বুথ স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে অস্থায়ী ভোট কেন্দ্র ৮টি এবং অস্থায়ী বুথ ৪৪টি।

৫ পৌরসভায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯শ ৬৭ ভোটার। তাদের মাঝে পুরুষ ৭৩ হাজার ৩শ ৮২ জন ও নারী ভোটার ৭২ হাজার ৩শ ৮৫ জন।

সূত্রে জানা যায়, কচুয়া পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রগুলোতে ৫২টি বুথ থাকবে। মোট ভোটার ১৫ হাজার ৬শ’ ৫৫ জন। এর মধ্যে পরুষ ৭ হাজার ৯শ ৩৪ ও নারী ৭ হাজার ৭শ ২১ জন।

মতলব পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ২২টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রগুলোতে ১শ’ ৩১টি বুথ থাকবে। মোট ভোটার ৪০ হাজার ৮শ’ ৬৩ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২০ হাজার ২শ’ ৬৮ ও নারী ২০ হাজার ৫শ ৯৫ জন।

হাজীগঞ্জ পৌরসভায় ১২টি ওয়ার্ডে ২০টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বুথ থাকবে ১শ ২৮টি। মোট ভোটার ১৯ হাজার ৬শ ৪৬ জন। পুরুষ ১৯ হাজার ৬শ ৪৬ ও নারী ভোটার ১৮ হাজার ৮শ ১৮ জন।

ছেংগারচর পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ১৫টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মোট ৮৫টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। মোট ভোটার ২৫ হাজার ৯শ ২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৯ ও নারী ১২ হাজার ৯শ ১১ জন।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ১৩টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মোট বুথ থাকবে ৭৫টি। মোট ভোটার ২৫ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৭শ ২৫ নারী ভোটার ১২ হাজার ৩শ ৪০ জন।

চাঁদপুরের এ ৫টি পৌরসভায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জেলা নির্বাচন অফিস। যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করা হবে বলে নির্বাচন অফিস জানিয়েছে।

অপরদিকে, চাঁদপুরের ডিআইও-১ (ডিএসবি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ৫টি পৌরসভার মোট ৭৯টি কেন্দ্র বিপরীতে ৫৪টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৫টিকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের ৬টি পৌর নির্বাচনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনে আগের বিধান নির্দলীয় প্রতীকে চাঁদপুর পৌর নির্বাচন হয়ে গেছে। এবারের দলীয় প্রতীকে বাকী ৫টি হওয়ার কথা থাকলেও নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে উচ্চ আদালত গড়িয়ে ছেংগারচর পৌরসভায় মেয়র পদে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। শেষ পর্যায় এসেও সরকার দলের কাছে হেরে গেলেন বিএনপির প্রার্থী। ফলে এ পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বর্তমান রফিকুল আলম জর্জই মেয়র হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে আর কোনো বাধা নেই বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে, মেয়র পদের বাকী ৪টি পৌরসভায় মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরিক্ষত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ভোটের মাঠে আ.লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিেেলও নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যেই ভোটের লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

প্রতিবেদক, দেলোয়ার হোসাইন

 ।। আপডেট : ০৪:০০ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫, রোববার

ডিএইচ/এমআরআর

Share