চলতি বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সটাকী বাজারের নৌকার কারিগর ও কাঠ ব্যবসায়ীরা। নতুন নৌকা তৈরির যেমন ধুম পড়েছে আবার অনেকেই পুরনো নৌকা মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা। এ কারণে জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই বিভিন্ন গ্রামে নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
উপজেলার সটাকী বাজারের কাঠপট্টির কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন বেশ ব্যস্ত। দিনরাত নৌকা তৈরি করছেন তারা।
উপজেলার সটাকী বাজারের ব্যবসায়ী দুলাল প্রধান (৫৫) বলেন,‘আমি দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত কাঠ ব্যবসা এই নৌকা তৈরি ব্যবসায় জািড়ত । আমি প্রথমে এই সটাকী বাজারে প্রথম নৌকা বানাই এবং বিক্রি করি। এছাড়া আমি বিভিন্ন হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে কমদামি খাট, চৌকি, দরজা, জানালা তৈরি এবং পাইকারি কাঠ বিক্রি করি। আর বর্ষা এলে নৌকা বানাই। এ সময় আমার কারিগররা দম ফেলার সময় পায় না। আমার একজন কারিগর দিনে একটা নৌকা বানায়। সারা সপ্তাহে যা নৌকা বানানো হয় খুচরা দুই-একটা বিক্রি ছাড়া সব নৌকা বিক্রি হয়ে যায় সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার ও মঙ্গলবার। এ হাটে ১০-১২টি নৌকা বিক্রি করতে পারি। পানি বাড়লে বিক্রি বাড়বে।
মতলবের বেরী বাধের বাহিরে যেসকল অঞ্চল রয়েছে এসব এলাকা এবং পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জেরর লোকজন এসেও এখান থেকে নৌকা কিনতে আসে।
এবার ৮ থেকে ১০ হাত দৈর্ঘ্যরে নৌকা চার-পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে।
একই বাজারের নৌকা তৈরির কারিগর চাঁন মিয়া বলেন, আমি বরিশাল থেকে বিভিন্ন জাতের কাঠ এনে এ বাজারে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করি। তবে বছরে দুই মাস নৌকা বানাই। বর্ষাকালে ঘরের কাজ একটু কম থাকে। এ সময়টাতে কাঠ একটু কম বেচা হয়। তাই বিকল্প হিসেবে নৌকা বানাই।
আর রোজ হিসাব করলে অন্য সময়ের চেয়ে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি পাই। আর একটি নৌকা বানাতে পারলে পাই ৮০০ টাকা। দৈনিক দুইজনে ৩টা নৌকা তৈরি করতে পারি। ৯ হাত থেকে ১৪ হাত পর্যন্ত দাম ৩৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত। প্রতি নৌকায় ১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ব্যবসা হয় তার। দুই দিনে দুইজনে ৬-৭টি নৌকা বানানো সম্ভব।
পাশের দোকানের নৌকা তৈরির কারিগর বিল্লাল (৪৫) বলেন, বর্ষা মৌসুমের এই দুই-তিন মাস আমরা প্রতিদিন গড়ে হাজার টাকা আয় করতে পারি। কাজেও ঝুঁকি কম।
সটাকী বাজার কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা বাড়ে। আর নিচু এলাকার মানুষের বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। আবার কেউ পুরনো নৌকা মেরামত শুরু করেছেন। আমাদের সটাকী বাজারে আশ-পাশের জেলাগুলো থেকে বের্ষয় নৌকা কিনতে আসে। তারা এখানে অন্যান্য নৌকার হাট থেকে এখানে সুলভ মূল্যে রেডিমেট নৌকা কিনতে পারে বিধায় এখানে জমজমাট নৌকার হাট। তকে শনিবার ও মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি জমে উঠে নৌকা বেচা-বিক্রি।
উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা বেরীবাধ এর বাহিরে শিকিরচর,সুগন্ধি,সটাকী,দশানী, মোহনপুরমএখলাছপুর,সানকিভাঙ্গা, চরকাশিম,বোরচর,চর উমেদ,বাহেরচর,সহ মেঘনা-পদ্মার তীরবর্তী গজারিয়া,কালিচর,মুন্সিীগঞ্জর এখানকার নৌকা ব্যবহার হয়ে থাকে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৪ জুলাই ২০২২