ফিচার

নো জঙ্গি বাট মানি : করণীয় নয় নিজেই করুন

জঙ্গিদের গ্রেফতার, হত্যা বা অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে সাময়িক নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও স্থায়ীভাবে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর বসে থাকার সুযোগ নেই। যেটা ২০০৬ সালে থেকেই করার কথা, কিন্তু আমরা পারিনি।

কারণ, আমরা কখনো পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ভবিষ্যতে পারবো কিনা সেটাও জানি না। আমরা এখনো দেশপ্রেমিক হতে পারিনি। আমরা শুধু একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে নিজের দায়িত্বটা আড়াল করার চেষ্টা করি।

আপনি অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজের থেকে শুরু করেন, দেখবেন সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না। যারা জঙ্গি দলের সদস্য তাদেরকে ফেরত আনা অত্যন্ত কঠিন।

কারণ তারা পৃথিবীর জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রশিক্ষণের সময় টিভি, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি দেখা এবং শুনা থেকে বিরত রাখার জন্য কঠিনভাবে তাদেরকে নিষেধ করা হয়।

এগুলো দেখলে বেহেস্তে যাওয়া অসম্ভব। তাদেরকে আইনীভাবে মোকাবেলা করা ছাড়া বিকল্প নাই। কারণ যে মৃত্যুর ভয় করে না সে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

কিছু বেসরকারি মাদ্রাসা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান,  এনজিও যারা বেশির ভাগই বিদেশি অর্থায়নে চলে। এসব মাদ্রাসাগুলোতে কোরআন হাদিসের নির্দেশনার সাথে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের নিজস্ব মতবাদ যুক্ত করে অপব্যাখ্যা দিয়ে আত্মঘাতি হামলার মাধ্যমে ইসলাম বিরোধীদের হত্যা করা সঠিক পথ ও মত বলে শিক্ষা দেয়।

শোনা যায় শিবির কর্তৃক পরিচালিত খ্যাতি অর্জনকারী কোচিং সেন্টার, এনজিও, ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও তালিম নামে একটি সংগঠন কাজ করছে। তালিম বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে গেছে। তালিমে কাজ করা মহিলারা খুবই সক্রিয়, অতি সহজে তারা মহিলাদেরকে তাদের মতবাদ বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়।

একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় নিজামী এবং মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পূর্বে জঙ্গি হামলার ঘটনা শুরু হয়। যা ফাঁসি ঠেকানোর সাথে যোগসূত্র আছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করে।

ছাত্রশিবির, ছাত্রীসংস্থা ব্যতিত ইসলামের নামে আরো একাধিক সংগঠন আছে। যদিও জামায়াত সংগঠনগুলোকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করে না। কিন্তু তাদের নীতি, আদর্শ, উদ্দেশ্য অনেকটা জামাতের সাথে মিল রয়েছে।

গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকেই পূর্বে জামাত ও শিবিরের সাথে জড়িত ছিল বলে প্রমাণিত হয়। চলমান কিছু প্রাইভেট মাদ্রাসাগুলি বেশির ভাগ পাহাড়ে, লোকালয়হীন নির্জন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় । কিছু জনবসতির মধ্যে হলেও এমনভাবে তৈরি করা হয় ভেতরে জঙ্গি কার্যক্রম চললেও বাহির থেকে বুঝার উপায় থাকে না।

পরিত্রাণ পেতে হলে বেসরকারি মাদ্রাসাগুলিকে বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন পূর্বক কার্যক্রম মনিটরিং করা, পাঠদান, ছাত্রদের সাথে মতবিনিময়, মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক /নীতি নির্ধারক যারা তাদের গতিবিধি, মোবাইল ট্রাকিং, বিদেশ গমন, অর্থের উৎস, ব্যয় কোথায় কিভাবে করছে তা পর্যবেক্ষণ করা ও গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে প্রতিবেদন সরকারের নিকট প্রেরণ।

একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি, চট্টগ্রাম বায়েজিদ থানায় থাকাকালীন ২০০৪ সালে একটি তদন্তে পাহাড়ের ভেতর একটি মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্র তাদের আচরণ, মাদ্রাসার অবকাঠামোগত অবস্থান তথায় আসা-যাওয়া লোকদের প্রতি নজরদারী সবকিছু মিলিয়ে মাদ্রসার কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হয়।

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করিলেও বিষয়টি কিছুই না এমন ভাব বুঝা গেল। তালিম শুরু থেকে গোপনে কাজ করলেও বাধা না পাওয়ায় প্রকাশ্যে কার্যক্রম তাদের পরিচালনা শুরু করে। তালিম প্রতি সপ্তাহে/১৫ দিনে নিজ সদস্যদের বাসা/বাড়িতে মহিলাদেরকে একত্রিত করে প্রথমে নামাজ, রোজা, নবী-রাসূল, বেহেস্ত-দোযখ সম্পর্কে বয়ানসহ শুদ্ধভাবে সূরা, কোরআন শরীফ পড়া শিখানো শুরু করে।

একপর্যায়ে নিষ্ঠার সাথে শ্রবনকারী মহিলাদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে পৃথকভাবে শিক্ষার মাধ্যম পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতঃ সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য করে।

তালিমের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, গঠনতন্ত্র নির্ধারণ পূর্বক নিবন্ধিত হতে হবে। সন্দেহজনক কোচিং সেন্টার, এনজিও, সরকারবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হয় ওই সকল স্থানে বাধ্যতামূলক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মনিটরিং করা।

সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার নিকট সংরক্ষিত থাকবে। শিক্ষকদের মোবাইল ট্র্যাকিংসহ গতি বিধি গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/অধ্যয়নরত ছাত্রদের ব্যবহৃত সবকটি সিমের মোবাইল নাম্বার, বিস্তারিত ঠিকানা গোয়েন্দা সংস্থার সংরক্ষিত থাকবে।

অনেক আলেম আছে আয়ের সাথে ব্যয়কৃত অর্থ, সঞ্চিত অর্থ প্রতিষ্ঠানের খরচকৃত অর্থের সাদৃশ্য নাই। অর্থের গতিবিধি অনুসন্ধান করলেই জঙ্গি নেতাকে চিহ্নিত করা সহজ হবে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আসা বন্ধ করতে হবে।

গ্রেফতারের পাশাপাশি জামাত-শিবির, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নেতাদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে দিয়ে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিলে জঙ্গিবিরোধী বক্তব্য প্রদান করার ব্যবস্থা করা।

তাহলে মিডিয়াতে দেয়া প্রকাশ্যে বক্তব্য ও জঙ্গি তৈরির সময় গোপন প্রশিক্ষণে দেয়া বক্তব্য স্ব-বিরোধী হবে।

জঙ্গি কি? কারা সৃষ্টি করেছে? উদ্দেশ্য কি? বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক একটি জঙ্গিবিরোধী বক্তব্য প্রস্তুত করে জুম্মার নামাজের খুতবার পূর্বে বয়ানের ব্যবস্থা করা।

প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মাসে খ্যাতি সম্পন্ন আলেম, ইসলামী সংগঠনের নেতা, মাদ্রাসার অধ্যক্ষদেরকে দিয়ে ক্লাস শুরুর পূর্বে/পরে হলরুম/মাঠে একত্রিত করে ১০/১৫ মিনিটের জঙ্গিবিরোধী বক্তব্য প্রদানসহ কোরআন হাদিসের আলোকে জঙ্গিবিরোধী বক্তব্য প্রদানের ব্যবস্থা করা।
যারা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিকভাবে তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্তসহ তার ভাই-বোন, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়া/করানো কঠিন হবে।

তার পরিবার সমাজের লোকজানের ঘৃনায় পাত্র হিসেবে গণ্য হবে। আমার ধারণা এবং পূর্ণ বিশ্বাস রাষ্ট্র যদি আমার প্রকাশিত মত থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি বলতে পারি যে, দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হবে না।

আসুন সবাই এক সুরে বলি-
০১। জঙ্গি হলো ইহুদিবাদ, আমরা হলাম আল্লাহর মতবাদ। ০২। ইহুদিবাদ জঙ্গি নিপাত যাক, ইসলাম এর সুনাম রক্ষা পাক। ০৩। আত্মঘাতি হবো না, দোযখের আগুনে জ্বলবো না। ০৪। টাকা নিবি তোরা দোযখে জ্বলবো আমরা। ০৫। এমন বেকুব হবনা, জঙ্গি দলে যাবো না। ০৬। মায়ের চোখের পানি ফেলবোনা, জঙ্গি আর হবনা। ০৭। ভুল পথে আর যাবনা। ভাইকে ভাই মারবো না।

আগের পর্ব পড়ুন- সজ্ঞা নয় জঙ্গি শব্দকে নিশ্চিহ্ন করুন

 লেখক- উপ-পরিদর্শক, গোয়েন্দা শাখা, চাঁদপুর।

——————
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ১০ : ৪০ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share