চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা মাধ্যমে আজ ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে বহুল-কাঙ্ক্ষিত নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম থেকে আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় ঘোষণা করা হবে এবারের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর প্রথম নাম।
এ বছরের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা ৭-১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। পুরস্কার ঘোষণার সবকিছু ‘নোবেল প্রাইজ’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হবে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথম দিনে ঘোষণা করা চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল পুরস্কারজয়ীর নাম। এরপর ছয়টি বিভাগে ছয় দিন নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ৭ অক্টোবর চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। আগামী ৮ অক্টোবর পদার্থবিদ্যা, ৯ অক্টোবর রসায়ন, ১০ অক্টোবর সাহিত্য, ১১ অক্টোবর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার শান্তিতে নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এছাড়া ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা।
শুধু বিচারকরাই জানেন কারা পেতে যাচ্ছেন নোবেল পুরস্কার। পুরস্কার ঘোষণার আগে অন্য কারো পক্ষে বিজয়ীদের নাম জানা কোনোভাবে সম্ভব হয় না। এমনকি বিজয়ীদের নাম ঘোষণার আগে ইঙ্গিত দেয়া থেকেও বিরত থাকেন বিচারকরা। তবে এ বিষয়ে কিছু জল্পনা থাকে সব সময়। নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রতিবছর ৩শ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এক বা একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসা,পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তিতে পুরস্কারগুলো সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থ থেকে দেয়া হয়। সুইডিশ শিল্পপতি নোবেল ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সালে এ পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। ১৯০১ সালে জার্মান জীববিজ্ঞানী এমিল ফন বেরিংকে ডিপথেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর সিরাম থেরাপি বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সর্বশেষ গত বছর ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার প্রথম দিন করোনাভাইরাসের টিকার প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য দুই বিজ্ঞানীকে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল বিজয়ী ওই দুই বিজ্ঞানী হলেন ক্যাটালিন ক্যারিকো ও ড্রু ওয়েইসম্যান। এমআরএনএ করোনার টিকার প্রযুক্তি করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর আগে পরীক্ষামূলক অবস্থায় ছিল। তবে এ টিকা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে। এখন ঠিক একই ধরনের এমআরএনএ প্রযুক্তি ক্যানসারসহ অন্য নানা রোগের টিকা আবিষ্কারের গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া প্রদান করা হয়। এটি প্রদান করে সুইডেনের কারোলিনস্কা সমিতি। ১৮৯৫ সালে সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল যে পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদানের ব্যাপারে দলিলে উল্লেখ করে গিয়েছিলেন তন্মধ্যে এটি অন্যতম। এ পুরস্কারটি ১৯০১ সাল থেকে নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে।
এ পুরস্কারের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে নোবেল ফাউন্ডেশন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে এটি সর্বজনস্বীকৃত। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বিজ্ঞানী নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এ পুরস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে। বিজয়ী বিজ্ঞানী সুইডেনের মহিমান্বিত রাজার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রত্যেক নোবেলবিজয়ী ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া একটি সবুজ স্বর্ণপদক, একটি ডিপ্লোমা ও একটি আর্থিক পুরস্কার পান। ২০২৪ সালের হিসাবে নোবেল পুরস্কারের আর্থিক পুরস্কার হল এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা, যা ১০ লাখ ৩৫ মার্কিন ডলারের সমান।
একটি নোবেল পুরস্কার তিনজনের বেশি ব্যক্তির মধ্যে ভাগ করা হয় না, যদিও নোবেল শান্তি পুরস্কার তিনজনের বেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যেতে পারে। নোবেল পুরষ্কার মরণোত্তর দেয়া হয় না, তবে যদি কোনো ব্যক্তিকে পুরস্কার দেয়া হয় এবং তিনি এটি পাওয়ার আগে মারা যান,তবে পুরস্কারটি প্রদান করা হয়।
আজ থেকে ১২২ বছর আগে ১৯০১ সালে এবং এর ৬৮ বছর পর ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০০০ জন বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৬২৭টি নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬৫ ব্যক্তি ও ২৭ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাঁচ ব্যক্তি ও দুটি সংস্থা একাধিকবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।
একমাত্র আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সর্বোচ্চ তিনবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। প্রতিবারই শান্তিতে। সালগুলো হলো: ১৯১৭, ১৯৪৪ ও ১৯৬৩।
প্রদত্ত মেডেলের সম্মুখ দিকে থাকে আলফ্রেড নোবেলের খোদিত ছবি যা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বা সাহিত্যের জন্য প্রদত্ত মেডেলের মতই। তবে অন্য পাশটা আলাদা। সেই পাশে মেধাবী এক চিকিৎসকের প্রতিকৃতি দেখা যায়, যে নিজের কোলে রাখা একটি উন্মুক্ত বই ধরে আছে এবং একই সাথে পাথরের বুক চিরে প্রবহমান পানি দিয়ে একটি মেয়ের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছে।
১৯১৫-১৯১৮, ১৯২১, ১৯২৫, ১৯৪০-১৯৪২ মোট নয় বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। অধিকাংশ বছরই দেয়া হয়নি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে।
১৯৩৯ সালে অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ এডলফ হিটলার গারহার্ড ডোমাগ নামের চিকিৎসাবিজ্ঞানীকে তার প্রাপ্য নোবেল পুরস্কার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি অবশ্য তার প্রাপ্য ডিপ্লোমা ও পদক গ্রহণ করেন, কিন্তু অর্থ ফিরে পাননি।
২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়িয়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা করা হয়। প্রত্যেক পুরস্কারের জন্য সনদ ও সোনার মেডেলসহ এ অর্থমূল্য দেয়া হবে।
এদিকে চলতি বছরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের ফিলিস্থিতি বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা (আনরোয়া) ও জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ড অব জাস্টিসকেও (আইসিজে) একই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেলের জন্য রাশিয়ার সাবেক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু পরে উভয়কেই বাদ দেয়া হয়েছে।
মারা যাওয়ার কারণে অ্যালেক্সেই নাভালনির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আর যুদ্ধরত একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাদ পড়েছেন জেলেনস্কি।
নরওয়ের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরদাল রয়টার্সকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘ দিন ধরেই সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার তৃতীয় বছরে পা রাখতে চলেছে,সুদানে গত দেড় বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। অন্যদিকে,মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস এক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয় করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
৭ অক্টোবর ২০২৪
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur