প্রতিকূলতা ও ডাচদের হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের।
অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দলের ইনিংস বলতে গেলে একাই টানলেন তামিম ইকবাল। বোলিং-ফিল্ডিং সেরা চেহারায় না থাকলেও কার্যকর হলো যথেষ্টই। স্লগ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করলেন মাশরাফি-তাসকিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুভ সূচনা পেল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে নিজের প্রথম ম্যাচে অঘটন-ঘটন-পটীয়সী নেদারল্যান্ডসকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে অপরাজিত ৮৩ রান করেন তামিম। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৩ রান তোলে বাংলাদেশ। ডাচরা ২০ ওভারে করতে পারে ৭ উইকেটে ১৪৫।
প্রথম আঘাত হানেন আলআমিন হোসেন। ওয়েলসি বারেসিকে (১১ বলে ৯ রান) ফেরান এই পেসার। তার বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে পুল করে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দেন বারেসি।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা স্টেফান মাইবার্গকে (২৯ বলে ২৯ রান) ফেরান নাসির হোসেন। তার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মাইবার্গ।
বেন কুপারকে (১৫ বলে ২০ রান) ফেরান সাকিব আল হাসান। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন নেদারল্যান্ডসের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দ্রুত পিটার বোরেন (২৮ বলে ২৯ রান) ও রোয়েলফ ফন ডার মারউইকে ফিরিয়ে দিয়ে নেদারল্যান্ডসকে চাপে ফেলে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের বলে নাসির হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন বোরেন। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন ফন ডার মারউই (৩ বলে ১ রান)।
বোলিংয়ে ফিরেই আঘাত হানেন আল আমিন হোসেন। তার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আরাফাত সানির চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন টম কুপার (১৮ বলে ১৫ রান)।
ইনিংসের শুরু থেকে দলের হাল ধরেন তামিম ইকবাল। এক প্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে গেলেন সময়ের দাবি মেনে, আরেক প্রান্তে শুধু ব্যাটম্যানদের আসা যাওয়া। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বলতে গেলে দলকে একাই টানলেন তামিম।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ২০১২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে সাকিব আল হাসানের ৮৪ রান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। টসের সময় দুই অধিনায়কের কাছেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য মনে হয়েছিল ভালো। কিন্তু খেলা শুরুর পরপরই বোঝা গেল, ঠিক ব্যাটিং স্বর্গ নয় উইকেট, বরং একটু মন্থর। বল ব্যাটে এসেছে একটু থেমে, বাউন্সও কখনও কখনও ছিল খানিকটা অসমান।
ইনিংস জুড়ে উইকেটের দুই প্রান্তে দেখা গেল দুই রকমের ব্যাটিং। তামিমের ব্যাটিংয়ে অস্বস্তি ছিল সামান্যই। অন্য প্রান্তে ধুঁকেছেন বাকিরা। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলেও খেই না হারিয়ে দলকে টেনে নিয়েছেন তামিম।
প্রথম ওভারেই এলোমেলো এক শট খেলে জীবন পান সৌম্য সরকার (১৩ বলে ১৫)। থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ ছাড়েন পল ফন মিকেরেন। তবে খুব দ্রুতই প্রায়শ্চিত্ত করেন নিজেই।
সাব্বির রহমানের শুরুটা ছিল সতর্ক। একটু থিতু হয়ে যখন হাত খোলার ইঙ্গিত দিলেন, আউট তখনই। রোয়েলফ ফন ডার মারউইকে উড়িয়েছিলেন মাথার ওপর দিয়ে। কিন্তু ছক্কার পরের বলেই অক্কা, সোজা বলে এলবিডব্লিউ (১৫ বলে ১৫)।
দু:সময়ের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের বোঝাপড়া হলো না এদিনও। ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেনের স্লো মিডিয়াম পেসে আউট হলেন বাজে এক শটে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ (৫)।
বাজে শটের প্রতিযোগিতায় সামিল হলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ ও ফর্মের জন্য লড়তে থাকা মুশফিকুর রহিম। মিডিয়াম পেসার টিম ফন ডার গুগটেনের তিন বলের মধ্যে আউট দুজন। সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড মাহমুদউল্লাহ (১০)। গুড লেংথ থেকে একটু ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড মুশফিক (০)।
আরেক পাশে তখনও দারুণ খেলে চলেছেন তামিম। ৪৬ রানে বেঁচে গিয়েছিলেন স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ দিয়েও। সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন দারুণ ভাবে। কিন্তু এক সময়ের ‘ফিনিশার’ নাসির হোসেন (৩) পারলেন না সঙ্গ দিতে।
একের পর এক উইকেট হারিয়ে রানের গতিও যায় থমকে। পরে শেষ ২ ওভারে ৩ ছক্কায় রানটা ছাড়ায় দেড়শ’। ফন গুগটেনকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন মাশরাফি। শেষ ওভারে লোগান ফন বিককে গ্যালারিতে ফেলেন তামিম। এমনকি ছক্কা মারেন আরাফাত সানিও! ৬টি চার ও ৩ ছক্কায় ৫৮ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম।
ডাচদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং লাইন আপের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের বোলারদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৩/৭ (তামিম ৮৩*, সৌম্য ১৫, সাব্বির ১৫, সাকিব ৫, মাহমুদউল্লাহ ১০, মুশফিক ০, নাসির ৩, মাশরাফি ৭, আরাফাত ৮*; ফন ডার গুগটেন ৩/২১, ফন মিকেরেন ২/১৭, বোরেন ১/৯, ফন ডার মারউই ১/২৮)
নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৪৫/৭ (মাইবার্গ ২৯, বারেসি ৯, বেন কুপার ২০, বোরেন ২৯, টম কুপার ১৫, ফন ডার মারউই ১, সিলার ৮*, বুখারি ১৪, ফন বিক ৪*; আল আমিন ২/২৪, সাকিব ২/২৮, মাশরাফি ১/১৪, নাসির ১/২৪)
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:০৬ অপরাহ্ন, ০৯ মার্চ ২০১৬, বুধবার
এমআরআর