Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / নিষিদ্ধ ট্রাক্টরের দখলে ফরিদগঞ্জের সড়ক, অতিষ্ঠ জনজীবন
ট্রাক্টরের

নিষিদ্ধ ট্রাক্টরের দখলে ফরিদগঞ্জের সড়ক, অতিষ্ঠ জনজীবন

নেই কোন সরকারের অনুমতি। নেই কোন ট্রাক্টর চালকের লাইসেন্স। নষ্ট করছে কোটি কোটি টাকার সড়ক। প্রশাসনের সামনেই চলছে নিষিদ্ধ যন্ত্র দানব এই ট্রাক্টর। সাধারণ জনগন প্রশ্ন করছেন? কার স্বার্থে, কার ইশারায় ফরিদগঞ্জে চলছে এই নিষিদ্ধ ট্রাক্টর।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নিষিদ্ধ ট্রাক্টরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, গ্রামীণ সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়েছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই। ফরিদগঞ্জের আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক গুলোতে অবাধে ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ট্রলি। গ্রামীণ পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা সড়কে মাটি, বালি, কাঠগাছ পরিবহনকারী অবৈধ ট্রাক্টরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলার মানুষ। সরকারে পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত নতুন সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করা হলেও এ যন্ত্রদানবের ভয়াল ছোবলে সড়কগুলো যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। বিবর্ণ লক্কর-ঝক্করে রূপ নিচ্ছে সকল ধরণের সড়ক।

হাল চাষবাদ দিয়ে পণ্য পরিবহন করায় হুমকিতে সড়ক। দিনে-রাতে সমানতালে পণ্য নিয়ে অবৈধ এই ট্রাক্টর চল্লেও এ সব বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ট্রাক্টর চলছে। স্থানীয়রা চায়ের আড্ডায় বাজারে বলে বেড়াচ্ছে কার স্বার্থে? কার ইশারায় চলছে এ নিষিদ্ধ ট্রাক্টর।

জানা যায়, এই ট্রাক্টরটির মূলত নাম হচ্ছে পাওয়ার টিলার। সেটি ইঞ্জিনের পেছনে ট্রলি ছাড়া। এটি তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষি কাজের জন্যে। আর এটিকেই কৃষি কাজে ব্যবহার না করে ইঞ্জিনের পেছনে বড় স্টিল বা কাঠ বডির ট্রলি লাগিয়ে এটির নাম দেয়া হয়েছে ট্রাক্টর। এই ট্রলির নিচে বিশাল সাইজের চারটি চাকা রয়েছে। এই চাকাগুলোই রাস্তা ধ্বংস করে ফেলে। এই ট্রাক্টর দিয়ে শুধু মাল পরিবহন করা হয়। বেশিরভাগ পরিবহন করা হয় ব্রিক ফিল্ডের ইট। এছাড়া রড, সিমেন্ট বালুসহ নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্য মালামালও পরিবহন করা হয়। অথচ এসব মালামাল মিনিট্রাক অথবা পিকআপ গাড়িতে করেও বহন করা যায়। ট্রাক্টর চলাচলের ক্ষতিকর দিকগুলো হলো: এর চালক অনভিজ্ঞ, অধিকাংশ ছেলে বয়সী, আনাড়ি, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন এবং মাদকাসক্ত। এরা দ্রুত এবং বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। এই বাহনটির বিশাল সাইজের ডোরাকাটা চাকার কারণে রাস্তা ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামের কাঁচা রাস্তা এবং হাইওয়ে রাস্তার তুলনায় কম মজবুত পাকা রাস্তাগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে এই ট্রাক্টর। এসবের সচিত্র প্রতিবেদন অনেকবার স্থানীয় পত্রিকায়।

বিশেষ করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ও ১৫ টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লার সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাসহ উপজেলার প্রত্যেক সংযুক্ত সড়কগুলোতেই দিনরাত চষে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ পরিবহন। অবৈধ ট্রাক্টরগুলো সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ে।

এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া ১৪ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। বৃদ্ধি পাচ্ছে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা।

গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর টলির দৌরাত্ম্য চলছে। এ যন্ত্রদানবের বেপরোয়ায় অতিষ্ঠ রোগী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ শিক্ষার্থীসহ প্রায় সর্বসাধারণ।

পথচারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ মিয়া জানান, এ ট্রাক্টর চলাচলের সময় আশপাশ এলাকায় কুয়াশার মতো ধূলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর ধূলোর মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করায় সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।

উপজেলার গাব্দের গাঁও গ্রামের আরিফ হোসেন (৩৫), রূপসার মনির (৪০) ও কমলকান্দি এলাকার খলিল(৪৭)সহ বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, হাল চাষের এই ট্রাক্টর হালচাষ বাদ দিয়ে কোন ক্ষমতা বলে পণ্য পরিবহন করছে তা আমাদের জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে অদৃশ্য কারণে চুপ থেকে এগুলো সড়কে চলাচলের জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে।

উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান পাটওয়ারী ও গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন সড়কের কাজ করি, আর এ সব ট্রাক্টর চলাচল করে নষ্ট করে দিচ্ছে। অনেক সময় আমরা ট্রাক্টরের মালিক ও চালকদের বললেও তারা কর্ণপাত করে না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেই ট্রাক্টরের দৌরাত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩