দুই সন্তানের জননী আছমা বেগম (৩৫)। বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর গ্রামে। পারিবারিক কলহের জেড়ে বহুদিন ধরে স্বামীর সাথে বনাবনি হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ভোগান্তির পর সংসার যখন ভাঙার পথে তখনই গত ২৫ জুলাই স্বামী মোহাম্মদ হোসেনকে বিবাদী করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সহায়তা ডেস্কে অভিযোগ দায়ের করেন।
মোহনপুরের পেয়ারা বেগমকেও (৪০) স্বামীর যৌতুকের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় দীর্ঘদিন নির্যাতন ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর গত ২ জুন স্বামী আব্দুল বারেককে বিবাদী করে তিনিও অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ পেয়ে ডেস্কের দায়িত্বে থাকা মতলব উত্তর থানার ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মো. আলমগীর হোসেন তাদের পারিবারিক কলহ নিষ্পত্তি করে দেন। তারা এখন সুখী।
এ ছাড়াও পালালোকদি গ্রামের নূর বানু, মিলারচরের সুমি বেগম, সাদুল্লাপুরের মুক্তা বেগমদের পারিবারিক নিযার্তন ও কলহের সমাধানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইন্সপেক্টর আলমগীর। গত ৮ আগষ্ট ২০১৬ তারিখে মতলব উত্তর থানায় যোগদান করার পর থেকে এ পর্যন্ত গত ১ বছরে এরকম নারী ও শিশু ঘটিত যৌতুক, বাল্য বিয়ে ও পারিবারিক কলহে ভূক্তভোগী শতাধিক পরিবারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।
ফলে মতলব উত্তরের জনগন পারিবারিক সমস্যা সংক্রান্ত সকল অভিযোগ নির্ভয়ে আলমগীর হোসেনের কাছে উপস্থাপন করছেন এবং তিনিও অগাধ ধৈর্য্য ও আস্থার সাথে তা সমাধান করছেন।
উপজেলার সাড়ে পাঁচানী গ্রামের সালমা বেগম (৩২) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী আরিফ হোসেন আমাকে যৌতুকের জন্য নিযার্তন করতো। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা চেষ্টা করে সমাধান দিতে পারেনি। সবশেষে আমি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সহায়তা ডেস্কে অভিযোগ করি। আলমগীর স্যার ধৈর্য্য ধরে আমার সমস্যার কথা শুনেন। তিনি আমার স্বামীকে থানায় ডেকে অনেক বুঝিয়ে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। এরপর আমার স্বামী তার ভুল বুঝতে পেরে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এখন আমি সুখে শান্তিতে আছি।
ফরাজীকান্দি গ্রামের শাহানারা বেগমের (৪৫) স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন তাকে জায়গা দিত না। এমনকি শিশু বাচ্চা’সহ তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। কোন উপান্তর না পেয়ে তিনি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সহায়তা ডেস্কে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে সমাধানের জন্য দ্রুত তৈরি হয়ে যান নারী ও শিশু নির্যাতন ডেস্কের প্রধান ইন্সপেক্টর আলমগীর। তিনি শাহানারার কথা শুনে শ্বশুড় বাড়ির লোকজনকে ডেকে বিভিন্ন কৌশলে বুঝান। এরপর তারা তাদের পুত্রবধু শাহানারাকে মেনে নেন এবং বাড়িতে জায়গা দেন। এখন শাহানারা ভালভাবে দিনাতিপাত করছেন।
বড় লক্ষীপুরের মুন্নি (১৯), লতরদি গ্রামের মিনারা বেগম (২২), নাওভাঙ্গা গ্রামের আছমা বেগম (২৬), মিঠুর কান্দির সুমি আক্তার (১৮) মুন্সিরকান্দি গ্রামের আছমা বেগম (৩২) দীর্ঘদিন স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। একইভাবে তাদের সংসার জোড়া লাগিয়ে দেন ইন্সপেক্টর আলমগীর।
তারা এখন সংসার নিয়ে সুখে শান্তিতে আছেন। এ ধরনের মহৎ দায়িত্ব পালন করায় মতলব উত্তরের জনগন ও নির্যাতিত সাধারন মানুষের কাছে ইন্সপেক্টর আলমগীর আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ২০১৬ সালে ৪২ টি, ২০১৭ সালের এ পর্যন্ত ৫৬ টি, এসপি অফিস থেকে আসা ৮ টি ও অন্যান্য ৬ টিসহ মোট ১১২ টি অভিযোগ এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর টাইমসকে কথা হয় ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো আদালতে নিস্পত্তি হতে অনেক সময় লাগে। আর এসময়ে মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় ও অনেক টাকাও খরচ হয়। শুধু তাই নয় মামলা আদালতে পাঠালে ওই সংসারটি টিকে থাকতে পারে নাও পারে।
তিনি আরো বলেন, এসব মামলাগুলো থানায় অথবা স্থানীয়ভাবে সমাধান হওয়ায় বিচার বিভাগেও (আদালত) চাপ পড়ে কম। এমনিতেই আদালতে মামলার অনেক চাপ। একটি মামলা মানুষকে অনেক ভোগায়। তাই মামলা নয় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এইসব অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য শতভাগ চেষ্টা করি।
ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় এম.কম পাশ করার পরই সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ বিভাগে চাকুরি করার। লক্ষ্যমতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরাসরি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগ পান। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) যোগদান করেন তিনি।
এরপর ২০০৭ সালে র্যাব-১ এ এবং পরে ২০০৯ সালে পুণরায় সিএমপিতে যোগদান করেন। এরপর ২০১০ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করার পর সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হয়ে ২০১২ সালে সিলেট রেলওয়ের ওসি হিসেবে ৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের আগস্টে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানায় ওসি (তদন্ত) হিসেবে যোগদান করেন। এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সহায়তা ডেস্কে কাজ শুরু করেন।
৩ সন্তানের জনক ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কায়েমপুর গ্রামে। তার স্বপ্ন যতদিন পুলিশে আছেন ততদিন মানুষের সর্বোচ্চ সেবা করবেন এবং শিশু ও নারীদের আইনগত নিরাপত্তা দিতে নিরলস কাজ করে যাবেন।
এর আগে ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে অসামান্য অবদান রাখায় চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কর্তৃক সম্মাননা ও নগদ অর্থ পুরস্কার পান। তিনি মোবাইল ট্র্র্যাকিং ও ইমেজিং সিস্টেমে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রতিবেদক- খান মোহাম্মদ কামাল
: : আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ০৩ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বুধবার
ডিএইচ