জাতীয়

নির্বাচন প্রস্তুতিতে হঠাৎ জোর গতি

জাতীয় সংসদ ও পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। মার্চের মধ্যেই প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম দৃশ্যমান করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আয়োজনে সীমানা সংক্রান্ত বা আইনি জটিলতা রয়েছে কিনা তা জানতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। চলতি মাসেই গাজীপুর সিটিতে তফসিল ও মে মাসে ভোট গ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে। অন্য চার সিটিতে রোজার ঈদের পর নির্বাচন হতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়াও শিগগিরই প্রকাশ করতে যাচ্ছে কমিশন। ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ এবং উপজেলা ও থানাভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি তৈরির বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে সব জেলা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৮ মার্চ সভা ডেকেছে ইসি সচিবালয়।

রোববার ইসি সচিবালয়ের উইং প্রধানদের সঙ্গে আকস্মিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। ওই বৈঠকে সিইসির নির্দেশনার পরই প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের গতি জোরালো করা হয়। রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না এগোনোয় বৈঠকে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের চেকলিস্ট তৈরির নির্দেশও দেন সিইসি। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উইং প্রধানদের সঙ্গে সিইসির বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ওটা ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক) বৈঠক। সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সামনে কি কি করা দরকার সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের কাছে সিইসি জানতে চেয়েছেন। কর্মকর্তারা তাকে প্রস্তুতির বিষয়গুলো অবহিত করেছেন। সিইসি কাজ এগিয়ে নিতে বলেছেন।

পাঁচ সিটি নির্বাচনের বিষয়ে ইসির অবস্থান জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, এ বিষয়ে এখনও কমিশন সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ওই বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচনী বিভিন্ন আইন ও বিধি সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, নির্বাচনী মালামাল ক্রয়সহ অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে উইং প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করলেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। নির্বাচনের প্রস্ততিমূলক কার্যক্রমের বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে চার নির্বাচন কমিশনার দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু তাদের ওই বৈঠকে ডাকা হয়নি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈঠকে পুরুষ ভোটার তালিকায় নারী ও নারী ভোটার তালিকা পুরুষের নাম থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সিইসি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের মতামত পাওয়ার পরই নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল চলতি মাসে ঘোষণা করা যায়- এমন প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

ইসি সূত্র বলছে, আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিশেষ কমিশন সভা ডেকে সেখানে তা অনুমোদন করা হতে পারে। এরপরই খসড়া প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটার প্রক্রিয়াতেও গতি বেড়েছে। চলতি মাসেই মালামাল কেনার টেন্ডার আহ্বান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে নির্বাচন ব্যয় খাতে ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পুরো টাকায় নির্বাচনী মালামাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের ফরম ও প্যাকেট মুদ্রণের জন্য তিন লাখের বেশি রিম কাগজ কেনার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ওই কর্মকর্তা বলেন, কয়েক ধরনের মালামাল রয়েছে, যেগুলো এখন কিনলেও নির্বাচনের আগে নষ্ট হবে না- সেসব মালামাল কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসাবে ৩১ অক্টোবর থেকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। যদিও কমিশন থেকে আগামী ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ওই দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার নিয়ম রয়েছে। অপরদিকে সিটি কর্পোরেশনের আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের ভোট গ্রহণ করতে হবে। এ হিসাবে ৮ মার্চ গাজীপুর, ১৩ মার্চ সিলেট, ৩০ মার্চ খুলনা, ৯ এপ্রিল রাজশাহী ও ২৭ এপ্রিল বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী সময়সীমা শুরু হচ্ছে।

সংসদ নির্বাচন : রোববার দুপুরে আকস্মিকভাবে উইং প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন সিইসি। এরপরই ওই দিনই বিকালে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান সিইসি। কর্মকর্তারা সার্বিক চিত্র সিইসির সামনে তুলে ধরেন। জানান, রোডম্যাপে বর্ণিত সময় অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম এগোচ্ছে না।

বৈঠকে জানানো হয়, কুমিল্লার একটি আসনের সীমানা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় সংসদীয় আসনের পরিবর্তন এনে খসড়া প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ সময় সিইসি কুমিল্লার সংসদীয় আসনগুলো বাদ দিয়ে বাকিগুলোর খসড়া প্রকাশে মত দেন। তখন কর্মকর্তারা জানান, রেওয়াজ অনুযায়ী সব আসনের খসড়া একই সঙ্গে প্রকাশ করা হয়। পরে সিইসি আইনি জটিলতা দূর করে দ্রুত সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন।

সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। রোডম্যাপে নভেম্বরে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করে ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের কথা উল্লেখ রয়েছে।

নির্বাচন
বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)সহ অন্যান্য আইন ও বিধিমালা সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে চান। সিইসিকে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বাধীন কমিটি দুটি আইন ও দুটি বিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধনীর সুপারিশ করেছে। সিইসি এসব সুপারিশ কমিশনে তোলার নির্দেশ দেন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন : একজন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এইচএসসি ও রোজা বিবেচনায় আগামী মে মাসে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণের বিষয়ে কমিশনে জোরালো আলোচনা চলছে। আগামী ১৬ বা ১৭ মে থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। আর ২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। ১৩ মে পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় মে মাসে ভোটের চিন্তা করা হচ্ছে। ওই সময়ে নির্বাচনের লক্ষ্যে গাজীপুরের ভোটার তালিকার সিডি তৈরির কার্যক্রমে হাত দিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। তবে গাজীপুর সিটির নির্বাচন ঢাকার দুই সিটির ভাগ্যবরণ না করে সেজন্য বাড়তি প্রস্তুতিও রাখছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি।(জুম বাংলা)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:৫০এ.এম ৯মার্চ,২০১৮শুক্রবার
কে এইচ

Share