নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর চাঁদপুরের সাহিত্যাঙ্গন

বর্তমান সময়ে শিল্প-সাহিত্য চর্চায় দেশের আদুরে জেলার নাম ‘চাঁদপুর’। নদীবিধৌত এই জেলায় সাহিত্যের উৎকর্ষ বিকাশে ১৯৮৬ সালের ৬ জুলাই শহরের জোড়পুকুর পাড় এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থেকেও এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুরে সাহিত্যের উৎকর্ষ বিকাশ এবং লেখক সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় বিভিন্ন সময়ে একাধিক পরিচালনা পর্ষদ কাজ করেছে। তবে সাহিত্য একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম পরিচালনা পর্ষদ গঠনে ব্যালটের মাধ্যমে সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটগ্রহণের দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। অতিশিগ্রই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নির্বাচন। ইতমধ্যে গঠন করা হয়েছে শক্তিশালি একটি নির্বাচন কমিশন। ফলে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের লেখক সমাজ কথা সাহিত্য অঙ্গনে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সাহিত্যপ্রেমীদের আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠছে সাহিত্য একাডেমী প্রাঙ্গণ। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক সাহিত্য আড্ডায় অংশ নিচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নবীন-প্রবীণ সাহিত্য প্রেমীরা। তারা সাহিত্য আড্ডার পাশাপাশি তাদের এই প্রাণের প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে নানা পরিকল্পনা আঁকছেন। পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু কিভাবে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বেশি সচল, সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত করা যায়। একদিকে চলছে সাহিত্যালাপ আর অন্যদিকে চলছে লেখকদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি। এই দুয়ে মিলে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির পরিবেশ এখন উৎসবমুখর আর প্রাণচঞ্চল।

লেখকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাহিত্য একাডেমির নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদের সম্ভ্যাব্য প্রাথীরা একাডেমীর সদস্যদের (ভোটার) মাথে দেখা করে এবং মুঠোফোনে কুশল বিনিময় করছেন। রাখছেন ভোটের আবদার। আর সাহিত্য একাডেমির সদস্য তথা ভোটাররাও উৎসাহ নিয়ে শুনছেন প্রার্থীদের কথা। জানতে চাইছেন নির্বাচিত হলে কেমন পদক্ষেপ নেয়া হবে সাহিত্য একাডেমির উন্নয়নে এবং সাহিত্যচর্চার প্রচার প্রসারে। সাহিত্য একাডেমি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুর এর সাধারণ সদস্য ২২০জন। সবশেষ সাহিত্য একাডেমীর নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমে ৭৬ জন প্রাথমিক সদস্য থেকে ৬৯ জনকে সাধারণ সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। গত ৫ মে সাহিত্য একাডেমীর প্রাথমিক সদস্য পদে আবেদন আহ্বান করা হয়। আবেদন সংগ্রহ ও জমা দেয়ার সর্বশেষ তারিখ ছিলো ২৫ মে। এ সময়ের মধ্যে মোট আবেদন জমা পড়েছে ৯৫টি। এরপর ৬ সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই উপকমিটি এই ৯৫টি আবেদন থেকে ৭০ জনকে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্যে একাডেমীর অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কাছে সুপারিশ করে। এছাড়াও ২০১৭ সালে প্রাথমিক সদস্য পদে আবেদনকৃত ০৯ টি আবেদন থেকে ০৬ জনকে প্রাথমিক সদস্য করা হয়।

বর্তমানে সাহিত্য একাডেমী মোট ভোটার ২২০জন। আর একাডেমীর সাংগঠনিক কাঠামো মোতাবেক পদ রয়েছে ২১টি। এর মধ্যে পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক। এছাড়াও সভাপতি কর্তৃক মনোনীত করা হবে আরো ৫টি পদে। এর মধ্যে সিনিয়র সহ-সভাপতি ১ জন, পরিচালক ১ জন ও কার্যনির্বাহী সদস্য ৩জন। বাকী ১৫টি পদে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হবেন। এসব পদের মধ্যে রয়েছে সহ সভাপতি ১ জন, মহাপরিচালক ১ জন, পরিচালক ৩ জন ও কার্যনির্বাহী সদস্য ১০ জন। সাহিত্য একাডেমী নির্বাচনে একজন ভোটার বিভিন্ন পদে ১৫ জন প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ইতিমধ্যে মহাপরিচালক পদে তিনজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় এসেছে। তারা হলেন: কবি ও সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক কাদের পলাশ, লেখক ও শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম এবং লেখক, আবৃত্তিকার ও ব্যাংকার শামীম আহমেদ খান। পরিচালক পদে তিনটি পদে প্রতদ্বন্দিতায় যাদের নাম কথা শোনা যাচ্ছে- তারা হলেন: লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, লেখক ও অনুবাদক মাইনুল ইসলাম মানিক, কবি, লেখক ও সাংবাদিক আশিক বিন রহিম, লেখক ও শিক্ষক ম নুরে আলম পাটোয়ারী, লেখক এইচএম জাকির, ইমরান শাকির ইমরু। এছাড়াও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শুনা যাচ্ছে। সাহিত্য একাডেমীর নির্বাচন প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বশির আহমেদ জানান, অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হবে। তারা তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবেন। তবে যেহেতু এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি তাই কারা থাকতে পারেন এই কমিটিতে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে সাহিত্য একাডেমী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমনটা আশা করছি আমরা।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ৩০ জুলাই ২০২৪

Share