প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই যথা সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। বিএনপি’র আগাম নির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এদেশে অবশ্যই যথাসময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা সেটা এনশিওর করবো।
ইলেকশন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। এটা নিয়ে অহেতুক পানি ঘোলার চেষ্টা বা সংবিধান লঙ্ঘন করে অন্যকিছু চিন্তা-ভাবনার সময় ও সুযোগ আর বাংলাদেশে নেই। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আমরা এটা হতে দেবো না ।’
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বিএনপি’র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবির জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যখন ভোট নিয়ে নানারকম অভিযোগ তোলে, আর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের কথা বলে, শুনে হাসি পায়। এসব কথা বলার আগে তাদের আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখা উচিত।
এদেশের নির্বাচন নিয়ে যেসব ঘটনাগুলো অতীতে ঘটেছে- নির্বাচনকে কিভাবে প্রভাবিত করা, নির্বাচনের নামে প্রহসন করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, এটা তো শুরুই করেছে বিএনপি।
পঁচাত্তরের পর জেনারেল জিয়া অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ‘হ্যা‘ ‘না‘ ভোট করেন। তখন ‘না‘ এর বাক্স পাওয়া যায়নি। শুধু ‘হ্যা‘ এর বাক্সই ছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নামে প্রহসন করলেন।
যেখানে ১০০ ভাগের ওপরে ভোট পাইলেন। কাজেই ভোট দেওয়ার অধিকার তো নষ্ট করে গেছে জিয়াউর রহমান। অবৈধ উপায়ে (ক্ষমতা) দখলকারী দলের হাতে তৈরি একটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলটি করা হয়েছিল।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়- তারা ভুলে গেছে ৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে তারা আগেই ঠিক করে রেখেছিল আওয়ামী লীগকে ৪০টির বেশি সিট দেবে না। বাকি সিট তারা নিয়ে নেবে। আর সেই ঘটনাই সেই সময় ঘটেছিল। বুথ দখল করা, সিল মারা, বাক্স ভরা-এটাই ছিল তাদের নির্বাচন। ’
দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ তারা প্রশ্ন তোলেন- নির্বাচনে কতজন আনকন্টেস্টে জিতেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা যে নির্বাচন করলো- ওই নির্বাচনে তো সবই আনকন্টেস্টে ছিল।
তখন ১৬০ না ১৬৪টি ছিল পুরো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ১৮টি সিটে কোনও নির্বাচনই হয়নি। তারা আবার নির্বাচনের ভালোমন্দের কথা কিভাবে বলে জানি না। জনগণের ভোট খালেদা জিয়া চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু জনগণ তা মেনে নেয়নি।
এজন্য তাকে ভোট চুরির অপরাধে মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হতে হয়েছিল। দুর্নীতি আর চুরি করা যাদের কাজ, তাদের মুখে আবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনছি।’
অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার না হয় তাহলে বিএনপি জেতে কিভাবে? অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করার তা আওয়ামী লীগই করেছে।’
নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে শক্তিশালী করা, আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা- এটা আমরা করেছি। আমরা বাজেটে টাকা দিয়ে দেই তারা খরচ করে। সেখানেও সরকারের মুখাপেক্ষী তাদের হতে হয় না। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশাসনের সবকিছু তাদের হাতে থাকে।
তারা যদি কাউকে বদলি করতে বলে, তখনি তাকে বদলি করা হয়। তাছাড়া বদলি হয় না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা স্পষ্ট দেখেছি, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন করেছে। আমাদের সরকরের সময়ে যতগুলো উপনির্বাচন হয়েছে, সব স্বচ্ছভাবে হয়েছে।
যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপি যখন নির্বাচন ঠেকাতে গেছে, জনগণ প্রতিরোধ করেছে। জনগণ ভোট দিয়েছে। ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা এই অধিকারের প্রতি সম্মান করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু আঁতেল শ্রেণি আছে। তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক স্বাদ। কিন্তু নির্বাচন করে ভোট পাওয়ার সাধ্য তাদের নেই।
এই লোকদের স্বাদ মেটাতে গিয়ে জনগণের ভোগান্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। আমরা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, অবশ্যই নিশ্চিত করবো।’
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ৪৫ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ