নির্বাচনী সহিংসতার প্রস্তুতি : বোমা তৈরিকালে আহত ২

কুমিল্লার তিতাসে বোমা তৈরিকালে বিস্ফোরণে হাতের কব্জিসহ চোখ বিচ্ছিন্ন হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে দু’যুবক। বৃস্পতিবার ভোররাতে উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের কাউরিয়ারচর পশ্চিমপাড়া প্রবাসী শফিকুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলো, ওই গ্রামের মো. আলী আকবরের ছেলে ইউনুছ (১৫) ও  মৃত মো. নান্ডু ফকিরের ছেলে ছিদ্দিকুর রহমান (১৯)।

তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এই ঘটনায় সখিনা বেগম (৩৫) ও ডালিম মিয়াকে (২৬) ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে তিতাস থানা পুলিশ।

আহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এরা সবাই আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ইব্রাহীম সরকারের সমর্থক।

থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নির্বাচনী সহিংসতার উদ্দেশ্যে উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের কাউরিয়াচর গ্রামের প্রবাসী শফিকুল ইসলামের বাড়িতে (বুধবার দিবাগত রাতে) বৃহস্পতিবার ভোররাতে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুমন্ত মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একের পর এক বোমার শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এতে ইউনুছ ও ছিদ্দিকুর রহমানের দুই হাতের কব্জি একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং একটি চোখ গলে যায়। বোমার স্প্রিন্টারের আঘাতে উভয়ের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।

এদিকে গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুমন্ত মানুষজন আতঙ্কে আত্মহারা হয়ে দিগি¦দিগ ছুটোছুটি করতে থাকে। এসময় স্থানীয় কলাকান্দি বাজারে অবস্থানরত টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে এবং বাড়ীর মালিক প্রবাসী শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সখিনা বেগমকে আটক করে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ডালিম নামের একজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ এলাকাবাসী।

গ্রেফতারকৃত ডালিম ও বোমায় আহত ইউনুছের বৃদ্ধ বাবা আলী আকবর বলেন, আমার ছেলে আগে থেকেই এই ঘরে থাকে। আপনার ছেলে কোন প্রার্থীর মিছিল মিটিং করে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার পাঁচ ছেলে সবাই আনারস প্রতীকের মিছিল করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানায়, ‘শফিক ও ইব্রাহিম বাহিনী কাউরিয়ারচর কেন্দ্র দখলের জন্য কয়েকদিন ধরেই এখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমরা পুলিশকে জানালেও তারা বলছে, বিয়ের বাজি ফোটায়। আমরা সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছি।’

উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আ’লীগের প্রার্থীকে হটাতেই এখানে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল। আজ ৩ দিন ধরেই এখানে বোমা ফাটিয়ে মহড়া দিচ্ছিল শফিক ও ইব্রাহীম বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। ইব্রাহীম ওয়ারেন্টভুক্ত বিধায় এখানে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে থেকেই এখানে বোমা তৈরি করছিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো এখানকার কেন্দ্রটি দখল করা।’

সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আ’লীগের একাংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ইব্রাহিম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে মনে করে আমার সমর্থকদের উপড় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার সময় পুলিশের সামনেই নাছির ও বাহার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা আহত ইউনুছের বড় ভাই ডালিমকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়। সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে আমি শঙ্কিত। এ বিষয়ে আমি থানায় মামলা করবো।’

তিতাস থানার এসআই মো. শহিদুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে একজনের হাতের দু’টি কব্জি ও অপরজনের চোখ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং দালানের বিভিন্ন স্থানে ফাটলসহ একটি কক্ষের গ্রিল দরজা দুমড়েÑমুচড়ে যায়। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছি এবং বাড়ীর মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছি। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’

 

কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট  :  আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:২০ পিএম,  ২৬ মে  ২০১৬, বৃহস্পতিবার

ডিএইচ

Share