নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ : বছরে ৩০ লাখ শিশুর জন্ম

আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। প্রতিবছর আমাদের দেশে ৩০ লাখ শিশু জন্ম নেয়। পপুলেশন কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলায় গড়ে ৬০ হাজার, উপজেলায় ৪ হাজার ও ইউনিয়নে ৬শ’ করে প্রতিবছরে আমাদের দেশে ৩০ লাখ শিশু জন্মায়। এদের স্বাস্ব্য সেবা নিশ্চিত করতেও স্বাস্থ্য বিভাগকে হিমশিম খেতে হয়।

বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হলেও মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব ও এর কার্যকারিতা অনুধাবন করে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে যথাযথভাবে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য দিবসটি পালন করা হয়।

সুন্দর জীবন ও সুস্থ সবল নবজাতকের জন্য নিরাপদ মাতৃত্বের বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজনে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন নিবির পরিচর্যা ও নিরাপদ প্রসব বিষয়ে সকল সেবা পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিত করা।

ইসলাম ধর্মে প্রসূতির নিরাপদ মাতৃত্ব লাভের অধিকার ও মাতৃস¦াস্থ্য পরিচর্যার শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাই গর্ভবতী একজন মাকে ধর্মীয় অনুশাসন ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। একজন সুস্থ মা একটি সুস্থ শিশু জন্ম দিতে পারে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মকান্ড আরও গতিশীল করতে সক্ষম হবে। সরকার গত বছরে দেশের স্বাস্থ্য খাতে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা দেছে, ৫৫ % মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে সরকার। বাকি ৪৫% মা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। দেশে এখনো ৬৮% প্রসব বাড়িতে হয় এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবা প্রদানকারীদের মাধ্যমে কেবলমাত্র ৩২% প্রসব হয় ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, দেশে গর্ভকালীন সময় শতকরা ১৪ জন মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন যা মাতৃমৃত্যু জন্য বহুলাংশে দায়ী। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, গর্ভকালীন জটিলতা, ফিস্টুলা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা ও পরিবারের অবহেলা মাতৃমৃত্যু অন্যতম প্রধান কারণ।

এক তথ্য মতে, প্রতিবছর আমাদের দেশে গড়ে প্রসবকালীন সময়ে ১৫ হাজার নারীর মৃত্যু ঘটে । ৮০% মৃত্যুর জন্য দায়ী অশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণবিহীন ধাত্রীর তত্ত্বাবাধন। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান গর্ভধারণ, গর্ভপূর্ব, গর্ভকালীন ও গর্ভ পরবর্তী সময়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যৃ হয়ে থাকে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।

ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশের নারীদের দীর্ঘমেয়াদী পুষ্টিহীনতা, প্রয়োজনীয় খাবারের অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতনতা, রক্তক্ষরণ, রক্তস্বল্পতা ও দীর্ঘ প্রসব বেদনার কারণে মাতৃমৃত্যু দায়ী ।

৫১ % মৃত্যুই রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির কারণে হয়ে থাকে। মাত্র ৬৮ % গর্ভবর্তী মহিলা ১টি প্রসবপূর্ব সেবা এবং ২৬ % মহিলা ৪টি প্রসবপূর্ব সেবাগ্রহণ করে থাকেন। ২০০১ সালে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যুহার ছিল ৩২২ জন।

এ হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সহস্রাব্দের উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অঙ্গিকারবদ্ধ এবং সরকার তা’ অর্জনে মা, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নকল্পে নানা কর্মসূচি হাতে নিতে হচ্ছে ।

১৯৮৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে উন্নয়ন সহযোগিতার বৈঠকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা নেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এর কার্যক্রম আরো জোরদার করা সুপারিশ করা হয়।

১৯৮৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে দিবস টি পালন হলেও ১৯৯৭ সাল থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২৮ মে ’কে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেয় ।

২০১০ সালে ওই হার কমিয়ে ১৯৪ এ আনা হয়। ২০১৬ সালের মধ্যে এ হার কমিয়ে আনা হবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সাফল্যের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনাকে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিউয়র্কে জাতিসংঘের ৬৬ তম সাধারণ অধিবেশনে এমডিজি পুরস্কার দেয়া হয়।

মাতৃ মৃত্যুহার কমাতে হলে নারী শিক্ষার হার আরও বাড়াতে হবে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ হলেই বছরে ১০ লাখ জন্ম কমবে। কাজেই নারীদের বিয়ের বয়স ১৬ করার যে প্রস্তাব আসে তা’ পরে বিবেচনা করে বাতিল হয়ে যায়। বাল্যবিবাহের নেতিবাচক নানা দিক রয়েছে। তাই বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ প্রত্যাখান করে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ওজিএসবি মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে না কমানোর দাবি করেছে। কেননা একজন মেয়ের মাতৃত্ব গ্রহণ, সন্তান লালন-পালন ও গর্ভকালীন যতœ সম্পর্কে সচেতন হতে যথাযথ সময় লাগে।
সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে হলে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে একজন মাকে সুস্থ ও শারীরিক গঠন ভালো হতে হয়। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে অনেক শিশু অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্ম নেয় বলে চিকিৎসকরা বলেন।

এ ছাড়াও স্বামী, সংসার ,নবজাতক ও অন্যান্য বিষয়গুলি সামলানো তার পক্ষে কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দিবসটি পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।

আবদুল গনি, সহ-সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস

Share