চীনের উহান থেকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মাতৃভূমিতে ফিরে এলেও বাবা, মা, ভাই, বোন ও আত্মীয়স্বজন কারও সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না ৩১২ জন বাংলাদেশি।
তাদের মধ্যে ৩০২ জনকে হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারান্টাইন অবস্থায় রাখা হয়েছে। বাকি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনকে সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং ৩ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ৩ জনের মধ্যে একজন নারী জ্বরের রোগী। ওই নারীর সঙ্গে তার স্বামী ও শিশুসন্তান ইচ্ছে করেই হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
আশকোনা হজ ক্যাম্পে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আর্ম মেডিকেল কোরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগতত্ত্ববিদরা তাদের সবার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন।
সেখানে কেমন সময় কাটছে তাদের, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে আসার পর তাদের অনেকেই এক ওয়ার্ডে ফ্লোরে প্রায় অর্ধশতাধিক শয্যা দেখে উস্মা প্রকাশ করেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদেরকে এখানে থাকতে হচ্ছে, ফলে বাসা-বাড়ির মতো পরিবেশ হবে না বলে কাউন্সিলিং করা হয়।’
তারা জানান, ‘পরে যাত্রীদের কাছ থেকে কার কী লাগবে সে চাহিদার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের জামা-কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধৌত করার জন্য নতুন ওয়াশিং মেশিন কেনা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে যেন অন্ধকারে না থাকতে হয় সে জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ইলেক্ট্রিক চার্জার, শিশু খাদ্য, হ্যান্ড টাওয়াল ও ওয়ার্ডে মেঝের বদলে বসে খাবার জন্য টেবিল-চেয়ার কেনা হয়েছে। মশার উপদ্রব থেকে মুক্ত রাখতে বারবার মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তাদের খাবার-দাবারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার খরচ বহন করছে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন চিকিৎসক জানান, ‘চীনের উহান থেকে ফেরা ও আশকোনায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৩০২ জনের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন। রোগতত্ত্ববিদ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের পরামর্শে উহান থেকে ফেরা ওইসব চিকিৎসকরাই থার্মাল হ্যান্ড স্ক্যানারে সবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। কোনো যাত্রীর জ্বর ও কাশি থাকলে ওই চিকিৎসকরা যেন বাইরে এসে খবর দেন, সে ব্যাপারে বলা হয়েছে।’
২৬ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়নি!
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চীন থেকে ফেরত আসা ২৬ নাগরিককে আশকোনা হজ ক্যাম্পে এনে কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদেরকে বিমানবন্দরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ছেড়ে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ‘প্রথমে চীন ফেরত সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও, পরবর্তীতে বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারে জ্বর দেখেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এমন চীনা অনেক নাগরিক তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চীনে গিয়েছিলেন।তাদের ২৬ জন দেশে ফিরেছেন। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আরও শতাধিক চীনা নাগরিক বাংলাদেশে ফিরবেন।’
ঢাকা ব্যুরো চীফ