প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ে, টিভির সংবাদ দেখে ও নাতনিদের সঙ্গে খেলা করেই সময় কেটে যায় এখন। চলচ্চিত্র দেখতেও বেশ পছন্দ করেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা।
ভক্তরা তাকে চেনেন নায়করাজ নামে। আবদুর রাজ্জাক তার আসল নাম।
সবশেষ ২০১৪ সালে বাপ্পারাজের পরিচালনায় তিনি ‘কার্তুজ’ ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। কিছুদিন আগে নিজের ৭৫তম জন্মদিন পালন করেছেন তিনি।
এছাড়া এ বছরের ৮ই আগস্ট এফডিসিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ উপলক্ষে ‘শুটার’ ছবি মুক্তির তারিখ ঘোষণা করা হয়। এ ছবির ঘোষণা উপলক্ষে এফডিসিতে এসেছিলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেকদিন এফডিসিতেও যাওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর ‘শুটার’ ছবির মুক্তি উপলক্ষে গিয়েছিলাম। অথচ একটা সময় এফডিসিতেই দিন-রাত কেটেছে আমার। শুধু অভিনয় নয়, চলচ্চিত্রের ট্যাক্স মওকুফসহ নানা দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনও করেছি। আর বর্তমানে তো যৌথ প্রযোজনার ছবির নামে প্রতারণা চলছে। আমাদের শিল্পীসহ সকলের বাংলাদেশের ছবির পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমাকে যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ভালোর জন্য এখনও কেউ ডাকেন এসব আন্দোলনে যেতেও প্রস্তুত আমি।
অনেক কষ্ট করে দেশীয় চলচ্চিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তাই চলচ্চিত্র নিয়ে এখনও ভাবেন এই অভিনেতা। অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে তিনি দেশীয় চলচ্চিত্রে অনেক অবদান রেখেছেন।
এদিকে গেল রোববার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে হঠাৎ গুজব ছড়ায় নায়করাজ রাজ্জাক মারা গেছেন। এমনটি এর আগেও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি ভালো আছি। আল্লাহ যখন নিয়ে যাওয়ার, তখন সবাইকে যেতে হবে। কে বা কারা এমন গুজব ছড়ায়, তা মাথায় আসে না। আমার এখন সবকিছুই স্বাভাবিক। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলছি।
রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় আসেন। এরপর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে ‘উজালা’ ছবিতে কাজ শুরু করেন। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করে নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখেন।
পরে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরো বেশ ক’টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে আত্মপ্রকাশ ঘটান এবং সবার মন জয় করে নেন। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ হিসেবে পরিচিতি পান।
প্রায় ৪০০-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি ১৬টি ছবি পরিচালনাও করেছেন। তার সবশেষ পরিচালিত ছবির নাম ‘আয়না কাহিনী’।
নায়করাজ প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। মোট চারবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন।
প্রায় ৫০ বছর ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন তিনি। সবশেষে তিনি বলেন, অভিনয় ও চলচ্চিত্রকে ঘিরেই আমার সবকিছু। স্বপ্ন ছিল আজীবন কাজ করতে করতে মারা যাবো। কিছুদিন আগে মরেই গিয়েছিলাম প্রায়।
আবার ফিরে এসেছি। বলতে গেলে আল্লাহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। কাজ করতে করতে যেন পৃথিবী ছাড়তে পারি, এই দোয়া ছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ১২ : ০০ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার
ডিএইচ