চাঁদপুরে গত দু’মাসে ২৪ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু রয়েছে। সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতার অভাবেই এসব শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেছে সচেতনমহল।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে (১৫) বছর বয়সী এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে অভিবাবকদেরকে সর্তক থাকার আহবান জানিয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রি সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট হাজীগঞ্জ উপজেলার সুদিয়াপূর্ব কাজী বাড়ি গ্রামের (১১) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
১৬ আগস্ট ফরিদগঞ্জের দক্ষিণ ধানুয়া গ্রামে (৯) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। একইদিন কচুয়া উপজেলার লুন্তি তালুকদার বাড়ির (৭) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
৯ আগস্ট মতলব উত্তর একলাসপুর গ্রামের (১০) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ও ৬ আগস্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামের (৬) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ওইদিন শাহরাস্তি উপজেলার বাতনতলা গ্রামের (৯) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
১৬ জুলাই চাঁদপুর তেতুলতলা গ্রামের (১৩) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ৮ জুলাই কচুয়া উপজেলার নওগাও গ্রামের (১৩) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
১৭ জুলাই উত্তর তারাবুনিয়া সখিপুর গ্রামে (১০) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ৯ জুলাই হাজীগঞ্জ উপজেলার ধড্ডা গ্রামের (১১) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। একইদিন শাহরাস্তি বিজয়পুর গ্রামে (১৩) বছর বয়সী ও শিশু ধর্ষিত হয়
এসব ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন উপজেলায় বেশ ক’কজন ধর্ষণকারীকে আটক করা হয়েছে। আর বাকি ঘটনায় ধর্ষণকারীরা পলাতক কিংবা মামলা চলমান রয়েছে।
১৬ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট বুধবার পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা শহরের হাজীগঞ্জ উপজেলা, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর , মতলব দক্ষিন, হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ১০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে ২০-২৫ বছর বয়সী নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে এসব তথ্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেজিষ্ট্রি খাতা ও বিভিন্ন সুত্রথেকে জানা গেছে।
গত ১৩ আগস্ট চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৭ বছর বয়সী ধর্ষিত শিশুকে আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকরি হাসপাতালে দেখতে গিয়ে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম।
এসময় এসপি সামসুন্নাহার পিপিএম অভিবাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বর্তমান সময়ে দেখা যায় অভিবাবকরা শিশুদের প্রতি ততটা গুরত্বসহকারে খোঁজ খবর রাখছেন না।
দেখা যায়, যাদের ১৫-১৬ বছর মেয়ে রয়েছে তারা তাদের প্রতিই বেশি নজর রাখছেন। শিশুদের প্রতি অভিবাকদের গুরত্ব কম থাকায় এসব অপরাধীরা শিশুদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সাথে এসব ঘটনা ঘটাতে সুযোগ পায়। এজন্য প্রত্যেক অভিবাবকদেরকে শিশুদের প্রতি আরো যতœবান ও সচেতন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতার কারণে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। দেখা যায় অনেক পরিবারের লোকজন সম্পর্কের কারণে যুবক কিংবা কিশোরদেরকে তাদের ঘরে স্থান দেন। এ সুবাদে অপরাধীরা ওইসব পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে শিশুদের সাথে অসামাজিক কাজ করে থাকেন।
এসপি সামসুন্নাহার বলেন, শিশুদের সাথে এমন আপত্তিকর কাজ করতে তাদের সহজ উপায় হলো শিশুদের বয়স কম হওয়ায় তাদেরকে নিয়ে খেলাধুলা করলে অথবা ঘুরে বেড়ালে লোকজন তেমন সন্দেহ করেনি। আর এ কারণে অপরাধটি করতে সহজ হয়ে উঠে। তাই আগামিতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য দরকার সামাজিক ও পারিবারিক জনসচেতনতা।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৯ : ৫০ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
এইউ