‘নারীকে ভোগ্য পণ্য মনে করেই ছেলেরা বড় হয়’

দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একজন নারী। বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার কিংবা অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদ- সবকিছুতেই আছেন নারী। বাংলার নারী স্থল থেকে আজ আকাশেও রাখছেন নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর।

কিন্তু তারপরও দেশে অর্জিত হয়নি নারী স্বাধীনতা। নারীর চেয়ে এখনো ‘না’র শক্তিই বেশি। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও নারী এখনো পায়নি তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা।

এমনটাই জানালেন বৃহস্পতিবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসা নারীরা। তাদের মতে, সরকার ও সাধারণ জনগণ মুখে মুখে নারী স্বাধীনতার কথা বললেও, এখনো নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যার জন্য মূলত দায়ী চলমান পুরষতান্ত্রিক সমাজ।

ইডেন মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী সুমাইয়া জাহান টুম্পা বলেন, ‘মুখে মুখে আমাদের অর্থাৎ নারীদের স্বাধীনতা রয়েছে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে নেই। এই যে আমি স্মৃতিসৌধে বান্ধবীদের সাথে ফুল দিতে এসেছি, তার জন্য বাসা থেকে বারবার অনুমতি নিতে হয়েছে। কিন্তু আমার সমবয়সী ছেলের ক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। সুতরাং, দেশে স্বাধীনতা এলেও আমার মনে হয় নারীর পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।’

আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জামিলা বেগম। ছেলে আশিককে নিয়ে স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন। কথা হলো তার সঙ্গে। বললেন, ‘ভাই, আমি গার্মেন্টে কাম কইর‌্যা খাই। নারী স্বাধীনতা কি আমি তা বুঝি না। তয়, এডা বুঝি আমার চাইতে আমার ব্যাটা কলিগ বেশ টাকা বেতন পায়। কিন্তু কাম সমানে সমান। সেই সঙ্গে ছোডবেলা দেখছিলাম, আমার ভাইরে বেশি দাম দিতো বাপ-মায়ে। আমারে সেজন্য লেখাপড়াও করায় নাই।’

ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা তাহমিনা হাসান শান্তা। স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে করে এসেছিলেন তিনি। তার মতে, বেগম রোকেয়া নারীদের জাগতে বলেছিলেন; কিন্তু নারীরা এখনো জাগতে পারেনি।

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নারীদের আসলে জাগতে দেয়নি এ সমাজের পুরুষেরা। কারণ, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা সব সময় নিগৃহীত থেকেছে। আর সেজন্যই পুলিশের কাছে ধর্ষিত হয় ইয়াসমিন, প্রেমে সাড়া না দেয়ায় ঝলছে যায় প্রচুর মেয়ের মুখ। কিন্তু যারা এগুলো করে তারা কিন্তু দিব্যি লোকসমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এগুলো যতোদিন বন্ধ না হবে ততোদিন পর্যন্ত নারীর স্বাধীনতাও অর্জিত হবে না। খালি মুখে বললে হবে না, নারীর শক্তিকে সম্মান করতে হবে। পুরুষদের মাঝে যখন নারীদের প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি হবে, তখন নারীরা আর নির্যাতিত হবে না। অর্জিত হবে নারীর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।’

নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা হলো দুই বন্ধু আসিফ ও শরিফুলের সঙ্গে। আসিফ বলেন, ‘আসলে বলতে দ্বিধা নেই, আমরা পুরুষরাই নারীদের স্বাধীনতা দেই না। আমরা মনে করি, নারীকে স্বাধীনতা দেয়া হলে সে খারাপ হয়ে যাবে বা নিজের হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাবে। এ অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে বর্তমান সময়ে। কিন্তু আরো উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।’

শরিফুল বলেন, ‘নারীকে টেভিভিশনের পর্দায় কিংবা গল্প-উপন্যাসে ভোগপণ্য হিসেবে দেখানো হয়। এর ফলে ছোটবেলা থেকেই একটা ছেলে নারীকে ভোগপণ্য মনে করেই বড় হয়। ফলে যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তার কাছ থেকে কোনো নারীই সে তার মা হোক, বোন হোক কিংবা স্ত্রী হোক সঠিক মর্যাদা পায় না। এটাই নারী স্বাধীনতার প্রধান বাধা বলে আমি মনে করি।’

দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলো। পা রাখলো ৪৫ বছরে। কিন্তু এখনো নারী স্বাধীনতা না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করলেন তরুণ প্রজন্ম। সেই সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশে দাঁড়িয়ে শপথ নিলো- নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার।

Share